মুনসুর রহমান তানসেন কাহালু থেকেঃ বগুড়ার কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের ভোলতা, ডেপুইল, কাজিপাড়া, বানিয়াদিঘী, শেখাহার এলাকায় লাচ্ছা সেমাই তৈরী হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী এই লাচ্ছা সেমাই অসাধু ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
বিভিন্ন সুত্রের তথ্যমতে রমজান মাস ও ঈদকে টার্গেট করে অধিক মুনাফার আশায় এখানে অস্থায়ী প্রায় ১০ টি কারখানা গড়ে উঠে। এই অস্থায়ী কারখানায় নি¤œমানের লাচ্ছা সেমাই তৈরী করে এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০/১২ ট্রাক লাচ্ছা সেমাই পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলাতে। স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি এই লাচ্ছা সেমাইগুলো কখনো খাঁচি আবার কখনো পাকেটজাত করে বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে সাশ্রয়ী মুল্যে পাওয়ায় অধিক মুনাফার আশায় দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা ছুঁটে আসেন এখানে লাচ্ছা সেমাই কেনার জন্য। তাদের মাধ্যমে নিম্মমানের এই সেমাইগুলো বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলার হাট-বাজারে। থেকে ৭/৮ ট্রাক নি¤œমানে লাচ্ছা সেমাই যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন খাঁচিতে রাখা লাচ্ছা সেমাই বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে।
সুত্রমতে এখানে অস্থায়ীভাবে গড়ে উঠা কারখানাগুলোতে তিন প্রকার লাচ্ছা সেমাই তৈরী হয়। ভুনা লাচ্ছা সেমাই, সাদা লাচ্ছা সেমাই ও পাকেটজাত লাচ্ছা সেমাই। অস্থায়ী কারখানাতে তৈরী লাচ্ছা সেমাইগুলোর মধ্যে সাদা লাচ্ছা সেমাই ১০০ টাকা, ভুনা লাচ্ছা সেমাই ১১০ টাকা ও পাকেটজাত লাচ্ছা সেমাই ১৮০ টাকা কেজি দরে পাইকারী হিসেবে বিক্রি করা হয়। এই সেমাইগুলোই বাজারে বিক্রি হচ্ছে সাদা লাচ্ছা ১৫০ টাকা কেজি, ভুনা লাচ্ছা সেমাই ১৭০ টাকা কেজি ও পাকেটজাত সেমাই ২৫০ টাকা কেজি।
জানা গেছে রমজান ও ঈদকে টার্গেট করে বীরকেদার ইউনিয়নের উল্লেখিত এলাকায় প্রতি বছর অস্থায়ী লাচ্ছ্ াসেমাই কারখানা গড়ে উঠে। অস্থায়ী কারখানাগুলোর মধ্যে কারো অনুমোদন আছে আবার কারো নেই। অনুমোদিত ও অনুমোদনবিহীন ২/১ টি বাদে প্রায় কারখানাতেই তৈরী হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে লাচ্ছা সেমাই তৈরী। যারফলে এই কারখানাগুলোর উপর স্থায়ীয় প্রশাসনের নজরদারী থাকলেও এখানে বন্ধ হয়নি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে লাচ্ছা সেমাই তৈরী।
অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে রাতের আধারে নোংড়া শরীরে দু-পা দিয়ে সেমাইয়ের ময়দা ছানা হয় এই কারখানাগুলোতে। প্রশাসনের লোকজন যাতে সহজে যেতে না পারে, সেই ধরনের স্থানেই এই অস্থায়ী কারখানাগুলো গড়ে তোলা হয়। ২/১ টি কারখানাতে লোক দেখানোর জন্য মিক্সার মেশিন থাকলেও তারা রাতের আধারে নোংড়া জায়গায় দু-পা দিয়ে ময়দা ছানে। প্রায় সব কারখানাতেই হাতে গেøাবস ছাড়াই ময়দার খামির ও সেমাই তৈরী করা হচ্ছে। আবার কোন কোন কারখানাতে পোড়া তেলেই ভাজা হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই।
ভোলতা গ্রামের মিম লাচ্ছা সেমাই কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে সেমাই ভাজার লম্বা পাত্রে পোড়া কুচকুচে কালো তেল। ঢেকে রাখা হয়নি ভাজা সেমাই। সেমাইয়ের উপর অনায়াশে পড়ছে মশা-মাছি। কারখানা মালিক শরিফুল ইসলাম জানান, সেমাই যেভাবে তৈরী হয়, সেই ভাবেই তৈরী করা হচ্ছে। সেমাই ঢেকে না রাখা, ময়লা তেলের বিষয়ে কথা বলা হলে তিনি সেই কথার কোন উত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
ডেপুইল এলাকায় নুর লাচ্ছা সেমাই কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে সেখানে মিক্সার মেশিন থাকলেও ময়দার খামির তৈরী করা হচ্ছে নোংড়া হাতে। ময়দার খামিরের উপর দুই-পা ছেড়ে দিয়ে গেøাবস ছাড়াই খামির করা হচ্ছে। সেই খামির দিয়ে গেøাবস ছাড়াই তৈরী করা হচ্ছে সেমাই। সেমাই তৈরীর পর পোড়া ময়লা তেলের মধ্যেই ভাজা হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই। কারখানা ম্যানেজার আল ফিজুর জানান, আমরা বিএসটিআইয়ের অনুমতি নিয়েই লাচ্ছা সেমাই তৈরী করছি। যেভাবে সেমাই তৈরী হয় ঠিক সেভাবেই আমরা সেমাই তৈরী করছি।
ভালতা গ্রামের আবু হুরায়রা নামের এক ব্যক্তি বিএসটিআইয়ের অনুমতি ছাড়াই অস্থায়ী কারখানায় লাচ্ছা সেমাই প্রস্তুত করছে। এই কারখানার পরিবেশ খুবই নোংড়া। সেখানে দেখা গেছে সেমাই ভাজার লম্বা পাত্রে পোড়া মবিলের মত তেল রয়েছে। আবু হুরায়রা জানান, আমরা সামান্য সেমাই তৈরী করি ঈদের জন্য। এবার বাজার খারাপ, তাই লোকসানে পড়তে হবে। ময়লা তৈলের বিষয়ে তিনি জানান, পাত্রের তেলগুলো ফেলে দিয়ে নতুন তেলে সেমাই ভাজা হবে।
কাহালু হাসপাতালের সেনেটারী ইনেসপেক্টার ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক আঃ সালাম জানান, অস্থায়ী লাচ্ছা সেমাই কারখানাগুলোর মধ্যে ২/১ জন বাদে প্রায় সকলেরই লাইসেন্স রয়েছে। কয়েকদিন আগেই ইউএনও স্যারের নেতৃত্বে সেমাই কারখানাগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হয়েছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে লাচ্ছা সেমাই তৈরীর দায়ে একজনের ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও হয়েছে। প্রয়োজনে আবার কারখানাগুলো পরিদর্শন করা হবে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ মেরিনা আফরোজ জানান, আমরা খুব শিঘ্রই সেমাই কারখানাগুলো আবার পরিদর্শন করবো। নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত আমরা হাট-বাজার মনিটরিং করাসহ খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের কঠোর নজরদারী রয়েছে।
Leave a Reply