মুনসুর রহমান তানসেন, কাহালু (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ বগুড়ার কাহালু উপজেলার দেওগ্রামে ১৯ বছর আগে নির্মিত দূর্গাপুর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র আজও লাগেনি স্বাস্থ্যসেবার কোন কাজে। জনগনের মতামত উপেক্ষা করে দূর্গাপুর বাজারের পরিবর্তে দেওগ্রামে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন নির্মাণ করায় সেখানে এখন পর্যন্ত জনগনের বাঁধার মুখে শুরু করতে পারেনি স্বাস্থ্যসেবা।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, কাহালু উপজেলায় রয়েছে একটি পৌরসভা ও নয়টি ইউনিয়ন। অত্র উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ২ লাখ ১৯ হাজার। জনসংখ্যার অনুপাতে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার জন্য বহু বছর আগে থেকেই অত্র উপজেলার পিলকুঞ্জ, নারহট্ট, মালঞ্চা ও দূর্গাপুরে রয়েছে ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবকাঠামো পর্যায়ক্রমে উন্নত করা হয়েছে। দূর্গাপুর ইউনিয়নের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পূর্বে থেকেই জনবহুল এলাকা দূর্গাপুর বাজারে রয়েছে।
সুত্রমতে বিএনপি সরকারের আমলে স্থানীয় জনগনের দাবী ও মতামত না নিয়ে দূর্গাপুর বাজারের পরিবর্তে দেওগ্রামে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করার পর তা হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়ায়। যখন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়, তখন স্থানীয় জনসাধারণ দূর্গাপুর বাজারে তা নির্মাণের জন্য দাবী জানান। শুধু জনগনের মতামতকে গুরুত্ব না দেওয়ায় সরকারের অনেক অর্থ ব্যায়ে নির্মিত উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নির্মাণের ১৯ বছর অতিবাহিত হলেও সেটি আজও স্বাস্থ্যসেবার কাজে ব্যবহার না হয়ে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
দেওগ্রাম-তালোড়া সড়কের পাশে দেওগ্রাম ঐতিহ্যবাহী মোল্লা বাড়ির কাছে ২০০৪ সালে এই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা গেছে মের্সার্স সাদিক এন্ড বাদ্রার্স সিলিমপুর, বগুড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে ২০০৮ সালের ২২ আগস্ট ভবনটি হস্তান্তর করে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। স্বাস্থ্য বিভাগ ভবনটি বুঝে পাওয়ার পর দূর্গাপুর বাজার থেকে দেওগ্রামে নতুন ভবনে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থানান্তরের চেষ্টা করলেও স্থানীয় জনসাধারণের বাঁধার মুখে তা ভেস্তে যায়।
স্থানীয় জনগনের মতে দূর্গাপুর বাজার হলো জনবহুল এলাকা। এখান থেকে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কার্যক্রম দেওগ্রামে স্থানান্তর করা হলে এই ইউনিয়নের সিংহভাগ জনগন স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়বেন। যারফলে কোনভাবেই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কার্যক্রম দূর্গাপুর থেকে দেওগ্রাম পার করতে দেওয়া হবেনা। যখন এই ভবন বুঝে পেয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ তখন থেকেই এটি ব্যবহার করতে পারেনি তারা।
১৬৯.৪২ বর্গফুট জায়গার উপরে নির্মিত এই ভবনটি। ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই দ্বিতল ভবনের চারপাশে অনেক জায়গা থাকলেও সেখানে নেই কোন প্রাচীর। ১৯ বছর আগে নির্মিত ব্যবহার না হওয়া এই স্বাস্থ্য বিভাগের এই ভবনটি রক্ষণা-বেক্ষনে নেওয়া হয়নি কোন উদ্যোগ। শুধূ রক্ষণা-বেক্ষনের অভাবে ভবনটির অধিকাংশ দরজা-জানালা গেছে ভেঙ্গে। ভবনের সামনের অংশে বড় বড় খড়ের পালা। সেখানে সবসময় বাঁধা থাকে গরু-ছাগল। সৌখিনভাবে নির্মিত এই ভবনের দেয়ালে গজে উঠেছে ছোট ছোট গাছপালা। ভবনের দেয়াল ও ছাদ আগাছায় ভরে গেছে। সরকারি অর্থে নির্মিত স্বাস্থ্য বিভিাগের এই ভবনটি রক্ষণা-বেক্ষনের অভাবে একপ্রকার পরিত্যাক্ত হয়ে রয়েছে
অনেকে মন করছেন সরকারি এই ভবনটি রক্ষণা-বেক্ষন করে সরকারি কাজে ব্যবহার হলে ভবনটি ভালো থাকবে। আর এভাবে পরে থাকলে ভবিষ্যতে এই ভবন আর কোন কাজেই লাগবেনা। ইউপি চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান খান বদের জানান, দূর্গাপুর ইউনিয়নের কেন্দ্রস্থল দূর্গাপুর বাজার। সেখান থেকে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র উঠে দেওগ্রাম যাওয়ার পক্ষে নেই জনগন। অথচ বিএনপি সরকারের আমলে সাধারণ জনগনের মতামত উপেক্ষা করে দেওগ্রামে সরকারের প্রচুর অর্থ ব্যায়ে নির্মিত উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি জনগনের কোনো কাজে লাগছেনা।
তিনি আরও জানান এলজি এসপিসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে আমি দূর্গাপুর বাজারে অনেক ভালো করে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবকাঠামো নির্মাণ করে দিয়েছিলাম। জনগনের চাহিদা মাফিক সেখানেই ভালোভাবে চলছে স্বাস্থ্যসেবার কাজ। দূর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ্ মাসুদ হাসান রুনজুর সাথে মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন সংযোগ পাওয়া যায়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ নীল রতন দেব জানান, আমি নতুন এখানে এসেছি। বিষয়টি আমার জানা ছিলোনা। আমি ভবনটি পরিদর্শন করে উর্ধতন কতৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠাবো।
সোনাতলা সংবাদে লিখতে পারেন আপনিও। যে কোনও তথ্য ও ভিডিও দিন নিচের WhatsApp নাম্বারে। প্রয়োজনে আপনার নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হবে।
মোবাইল: ০১৭৭৪৬৫০৬৭১
E-mail: sonatalasangbad@gmail.com