মুনসুর রহমান তানসেন, কাহালু থেকেঃ ভোজ্য তেলের সংকট মোকাবেলায় সরিষার চাষাবাদ বাড়ানোর জন্য সারা বাংলাদেশে ন্যায় বগুড়ার কাহালু উপজেলায় সরকারিভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। যারফলে সরকারি প্রণোদনা আর কৃষি বিভাগের পরামর্শে অত্র উপজেলায় গত বছরের চেয়ে এবছর প্রায় দ্বিগুন জমিতে সরিষার চাষবাদ হয়েছে।
এদিকে কৃষি বিভাগের পরামর্শ এবং চাষিদের কঠোর পরিশ্রমে চলতি মৌসুমে সরিষার ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। কিন্ত সরিষা ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ফরিয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাতœ্য এবং কারসাজিতে কৃষকরা, তাঁদের কষ্টে অর্জিত সরিষার নায্যমুল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ি গত বছর এখানে ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছিলো। এবছর সরকারি প্রণোদনা ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে গত বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন ৭ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ করা হয়। বিভিন্ন মাঠ ঘুরে লক্ষ্য করা গেছে মাঠে মাঠে চলছে সরিষা উঠানোর কাজ। মেশিনের মাড়াই করে বের করা হচ্ছে সরিষার দানা। চাষি ও কৃষি বিভাগের তথ্যমতে চলতি মৌসুমে সরিষার ফলনও বেশ ভালো হয়েছে।
দামাই গ্রামের সরিষা চাষি লক্ষিন চন্দ্র জানান, তিনি ৫ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। বিঘাপ্রতি সরিষার ফলন হয়েছে ৭ মন। বোরো চাষের খরচ যোগাতে জমি থেকে তুলেই ২ হাজার টাকা মন সরিষা বিক্রি করেছেন। কিন্ত তাঁর কাছ থেকে ৪১ কেজিতে ১ মন হিসেবে সরিষা নেওয়া হয়েছে। অথচ ৩৭.৩২ কেজিতে ১ মন হলেও ফরিয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীরা এভাবেই কৃষকদের ফাঁকি দিয়ে মনে আড়াই কেজিরও বেশি সরিষা নিচ্ছে। জাহাঙ্গীর আলমসহ একাধিক সরিষা চাষি জানালেন তাঁদের কাছ থেকে ৪১ কেজিতে মন হিসেবে ব্যবসায়ীরা সরিষা কিনছে।
উচল বাড়িয়ার সরিষা ব্যবসায়ী জাহিদ জানান, ৪১ কেজিতে মন হিসেবে সরিষা নেওয়া হচ্ছে। কারন হিসেবে তিনি জানান, সরিষা শুকালে মনে কয়েক কেজি কমে যায়। তিনি স্বীকার করলেন ৪১ কেজিতে মন হিসেবে সরিষা কিনে কেজি হিসেবে বড় ব্যবসায়ীদের কাছে সরিষা বিক্রি করেন। তিনি প্রতিদিন গড়ে ১৫০ মন সরিষা ক্রয়-বিক্রিয় করছেন।
শিলকঁওড়ের সরিষা ব্যবসায়ী আবু জাফর ও রশিদ জানান, তারা ৪১ কেজিতে মন হিসেবে সরিষা ক্রয় করছেন। সরিষার কোয়ালিটি অনুযায়ি ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা মন সরিষা ক্রয় করছেন। বিবিরপুকুরের সরিষা ব্যবসায়ী গোলাম রব্বানী জানান, গত কয়েকদিনে তিনি প্রায় ৭ হাজার মন সরিষা ক্রয়-বিক্রয় করেছেন। তাঁরমতে সরিষা কেজি হিসেবে ক্রয়-বিক্রয় হয়না। আমরা ৪১ কেজিতে মন হিসেবে নিয়ে ৪১ কেজিতে মন হিসেবেই সরিষা বিক্রি করছি। তাঁরমতে সারাদেশে এভাবেই সরিষা ক্রয়-বিক্রয় চলছে।
ব্যাবসায়ী ও কৃষকদের তথ্যমতে চলতি মৌসুমের সরিষা তোলার আগ পর্যন্ত গত বছরের সরিষা বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ টাকা মন। কৃষকদের মতে চলতি মৌসুমে কটকটা শুকনো সরিষা উর্ধে ২ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর জমি থেকে সরিষা তোলার পরপরই বিক্রি করলে ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে উর্ধে ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের মতে সরিষার কোয়ালিটি অনুযায়ি ২ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা মন সরিষা ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এমনিতে সরিষার দাম কম। তারপরে আবার কৃষকের কাছ থেকে ৪১ কেজিতে মন হিসেবে কেনা হচ্ছে সরিষা। অনেকের মতে কৃষকদের সুফল মধ্যস্বত্বভোগী ও মজুতদারদের কাছে চলে গেলে ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পরবে। সরিষার ক্রয়-বিক্রয়ে নজদারী থাকলে ভোজ্যতেল নিয়ে সমস্যাই পরতে হবেনা সাধারণ মানুষকে।
উপজেলা কৃষি অফিসার জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, বিপনের বিষয়ের উৎপাদনের আমাদের দিকনির্দেনা রয়েছে। বিপনের বিষয়ে আমাদের করবার কিছু নেই। তিনি আরও জানান, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌড়াতœ্য কমাতে আমরা চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছি তাঁরা তাঁদের উৎপাদিত সরিষা সংরক্ষণ করার পর যেখানে নায্যমুল্য পাবে সেখানে যাতে বিক্রি করেন।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ মেরিনা আফরোজ জানান, কৃষকের সরিষা ক্রয়ের ক্ষেত্রে ওজনে কেউ কারসাজি করলে যদি অভিযোগ পাই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply