কাহালু (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ বগুড়ার কাহালু উপজেলার শিলকঁওড় মাঠে দেশীয় অস্ত্রের মহরা দিয়ে সেতু মোহাম্মদ ওয়াকফ স্টেটের সম্পত্তির ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। ধান কাটতে রোস্তম ও বাদল বাহিনীর অস্ত্রের মহরায় আতঙ্কিত বর্গাচাষি ও সাধারণ মানুষ। জানা গেছে শিলকঁওড় গ্রামের তালুকদারদের ওয়াকফ সম্পত্তির নিয়মিত মোতায়াল্লি হিসেবে সম্পত্তি দেখাশুনা করছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন তালুকদার বেলাল। প্রায় ১৮৪ বিঘা এই ওয়াকফ সম্পত্তির ওয়ারিশের দাবীদার শফিউজ্জামান তালুকদারসহ আরও কয়েকজন। শফিউজ্জামানের পক্ষ নিয়ে গত রোববার থেকে অস্ত্রের মহরা দিয়ে গরীব বর্গা চাষিদের ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে লহরাপাড়ার রোস্তম ও বাদলের লোকজন। অথচ এই রোস্তম ও বাদল শিলকওঁড় তালুকদারদের কোন ভাগী বা ওয়াকফ সম্মত্তির কোন ওয়ারিশ নয়। গত তিনদিন ধরে তারা অস্ত্রের মহরা দিয়ে ধান কর্তন করলেও পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আতঙ্কিত বর্গাচাষি ও সাধারণ মানুষজন। গতকাল মঙ্গলবার কাহালু থানার এস আই মহিউদ্দিন ও একজন সিপাহীকে ঘটনাস্থলে দেখা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বর্গাচাষি শিলকঁওড় গ্রামের নজরুলের স্ত্রী মাসুমা জানান, রোস্তম ও বাদল বাহিনীর লোকজন পুলিশের সামনে দেশীয় অস্ত্রের বস্তা নিয়ে গেলেও তাদেরকে ধরেনি। বর্গাচাষি আঃ খালেকের স্ত্রী শাহানারা জানান, রোস্তম ও বাদল বাহিনীর লোকজন দেশীয় অস্ত্রের মহুরা দিয়ে শুধু ধানই কাটছেনা। তারা বর্গাচাষীদের বাড়ির সামনে গিয়ে হ্যান্ড মাইক দিয়ে ঘোষনা করে যারা ওয়াকফ সম্পত্তিতে যাবে তারা জীবন নিয়ে ফিরে আসতে পারবেনা। বর্গাচাষি আইজার রহমান জানান, আমি সাড়ে ৪ বিঘা জমি পত্তন নিয়েছি। আমি ধান কেটে জমিতে রাখার পর রোস্তম ও বাদল বাহিনীর লোকজন রামদা, বড় বড় হাসুয়া ও রডসহ দেশীয় অস্ত্রের মহরা দিয়ে আমার কষ্টে অর্জিত ধান লুট করে নিয়ে গেছে। এদিকে পুলিশের রহস্যজনক ভুমিকার কারনে গতকাল মঙ্গলবার বর্গাচাষির স্ত্রীসহ আতঙ্কিত প্রায় ২০ জন নারী তাদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে এসে রোস্তম ও বাদল বাহিনীর বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ করেন। ওয়াকফ সম্পত্তির দাবীদার শফিউজ্জামান তালুকদারের ছেলে রাসেদ জানান, আমাদের জমির ধান আমার ভাই নিতে গেলে বেলাল তালুকদারের লোকজন আমার ভাইকে মেরে পা ভেঙ্গে দিয়েছে। যারফলে ক্ষুব্ধ মানুষ প্রতিবাদ করেছে। মোবাইল ফোনে রোস্তম জানান, আমি একজন মহৎ মানুষ। আমি কারো ক্ষতি করিনা এলাকায় আসলে জানতে পারবেন। আমি শুধু অন্যায়ের প্রতিবাদ করে থাকি। মোবাইল ফোনে বাদল জানান, আমি দুদিন ধরে এলাকায় ছিলাম না। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন তালুকদার বেলাল জানান, আমি সেতু মোহাম্মদ ওয়াকফ সম্পত্তির নিয়মিত মোতায়াল্লি। রোস্তম ও বাদল বাহিনী অস্ত্রের মহরা দিয়ে গরীব বর্গাচাষিদের কষ্টে অর্জিত ধান হারভেস্টার মেশিন দিয়ে কেটে নিয়ে যাচ্ছে কয়েক দিন ধরে। পুলিশকে জানানোর পরেও লোক দেখানো জন্য মাত্র দুজন পুলিশ মাঝে-মধ্যে ঘটনাস্থলে গেলেও কাজের কাজ কোনটিই হচ্ছে। পুলিশের নমনীয় ভুমিকায় বর্গাচাষিসহ শিলকঁওড় গ্রামের নারী-পুরুষ খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। নারহট্ট ইউপি চেয়ারম্যান আঃ রহিম জানান, ওয়াকফ সম্পত্তির আরও ওয়ারিশ আছে। সেই ওয়ারিশের লাগানো ধান কাটতে গেলে আগে রাজেগকে মারপিট করা হয়েছে। এব্যাপারে এস আই মহিউদ্দিনের সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, আমরা মানুষ দুজন। ধানই দেখাশুনা করবো না মাঠের মধ্যে দৌড় দিয়ে বর্গাচাষিদের কথামত সবাইকে তল্লাশী করবো। আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে বিষয়টি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি। কাহালু থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আমবার হোসেন জানান, বিষয়টি আন্তরিকভাবে দেখা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাপিয়া সুলতানা জানান, বিষয়টি নিয়ে নারহট্ট ইউনিয়নের বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানকে নিয়ে বসা হয়েছিলো। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও কাহালু থানা পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যারা ওয়াকফ জমিতে ধান লাগিয়েছে তারাই ধান কাটবে। একজনের লাগানো ধান অন্য কেউ কাটটে পারবেনা।
Leave a Reply