মুনসুর রহমান তানসেন, কাহালু থেকেঃ নতুন ধান কাটার পরে নতুন চালে নতুন অন্য এ যেন এক অন্যরকম আনন্দ। শীতের আগে হেমন্তের মাঝমাঝিতে অধিকাংশ বাঙালির ঘরে ঘরে নবান্ন উৎনব। মাছে-ভাতে বাঙালি, নতুন চালে রান্না করা ভাত, সাথে বড় মাছের চাকা খেতে দারুণ মজা। নতুন চালের আটায় বিভিন্ন পিঠে-পুলি, আতব চালের পায়েশ রান্না হয়েছে বাঙালির ঘরে ঘরে। নতুন চাল আর খেজুর গুড়ে খিরের স্বাদ নিতে কার-না মন চায়। ধর্ম-বর্ণের বৈষম্য নেই নবান্ন উৎসবে। নবান্ন উৎসবে আতœীয়স্বজনের পাশাপাশি নিমন্ত্রিত হন অনেকে। এ যেন অসাম্প্রদায়িক বাঙালির এক মিলন মেলা। বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতির বিভিন্ন উৎসবের মধ্যে নবান্ন উৎসব একটি অন্যতম উৎসব। অসাম্প্রদায়িক বাঙালির সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে প্রতি বছর ফিরে আসে পহেলা অগ্রহায়ণ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ন্যায় গতকাল শুক্রবার বগুড়ার কাহালু উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ঘরে ঘরে ছিলো নবান্ন উৎসবের আমেজ। নবান্ন উৎসব উপলক্ষে গতকাল কাহালু বাজারে তোলা হয়েছিলো ১৮/২০ কেজি ওজনের ব্রিগেট মাছ। বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক ক্রেতা এসে কিনেছেন এই বাজারের সেরা মাছ। কাহালু বাজারের মাছ বিক্রেতা হালিম জানান,তিনি ১৮/২০ কেজি ওজনের বেশ কয়েকটি মাছ এনেছিলেন এবং সবগুলো মাছই বিক্রি হয়েছে। কাহালু বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সাহেদ জানান, তিনি ১৪ কেজি ওজনের বেশ কয়েকটি ব্রিগেট মাছ বিক্রি করেছেন। মাছ ব্যবসায়ী সাইফুল জানান, তিনি ৫/৬ কেজি ওজনের মাছ বেশী বিক্রি করেছেন। ঋতুবৈচিত্রে হেমন্ত আসে শীতের আগেই। কার্তিক আর অগ্রহায়ণ মাস নিয়ে হেমন্ত ঋতু। অগ্রহায়ণের নবান্ন নিয়ে আসে বাঙালির ঘরে ঘরে খুশির বার্তা। নতুন ধান ঘরে তোলার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন গ্রাম-বাংলার কৃষক-কৃষাণীরা। নতুন ধান ঘরে উঠলেই পিঠেপুলি-পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে বাঙালির ঘরে। পাড়ায় পাড়ায় চলা নবান্ন উৎসব গ্রাম-বাংলায় নতুন এক আবহের সৃষ্টি হয়। নবান্ন উৎসরে সাথে মিশে আছে বাঙালিদের হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর বাঙালির সংস্কৃতির নানা দিক। প্রাচীন কাল থেকেই ধর্ম-বর্ণ উপেক্ষা করে নবান্নকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতে উঠে বাঙালিরা। এই উৎসব তৈরী করে একে অন্যের সাথে গভীর সম্পর্ক। এই উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হয় গ্রামীণ মেলা। প্রবীণজনদের মতে, নবান্ন উৎসবকে ঘিরে আগে বিভিন্ন বাড়ির উঠানে আসর বসতো বাউল গান, জারী গান, ভাটিয়ালি গান মুর্শিদী গানসহ বিভিন্ন পালা গান। কালের আবর্তে আর সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে বাঙালির সম্প্রীতির উৎসবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন গানের আসর তেমন আর হয়না। বাঙালির সম্প্রীতির নবান্ন উৎসবসহ বিভিন্ন উৎসব বহমান রাখতে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও নাট্য সংগঠনগুলো বরাবরই সোচ্চার। বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতি তুলে ধরতে এবং উৎসব পালনে নতুন করে জাগরণ সৃষ্টি হোক এমন প্রত্যাশা সকলের।
সোনাতলা সংবাদে লিখতে পারেন আপনিও। যে কোনও তথ্য ও ভিডিও দিন নিচের WhatsApp নাম্বারে। প্রয়োজনে আপনার নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হবে।
মোবাইল: ০১৭৭৪৬৫০৬৭১
E-mail: sonatalasangbad@gmail.com