মুনসুর রহমান তানসেন, কাহালু (বগুড়) থেকেঃ বগুড়ার কাহালু উপজেলার একমাত্র নদী নাগর নদ। এই নাগর নদ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি অন্যতম স্মৃতিবিজরীত নদ। নৌকায় চড়ে নাটোরের সিংড়ার চলনবিল হয়ে নাগর নদে আসতেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আমরা অনেকেই ছোটবেলা থেকেই পড়ে আসছি আমাদের ছোট নদী চলে আঁকে-বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে।
পূর্ববঙ্গে থাকাকালে যে নদীগুলো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তায় সবচেয়ে বেশী প্রভাব ফেলেছে তারমধ্যে অন্যতম এই নাগর নদ। প্রকৃতি ও নদীনির্ভর যাপিত জীবন তারঁ সাহিত্যকে সম্মৃদ্ধ করেছে। বাংলাদেশে দুটি নাগর নদী রয়েছে। একটি বগুড়ার শিবগঞ্জের কাছে করতোয়া নদী থেকে বের হয়ে কাহালু, দুপচাঁচিয়া, নদীগ্রাম, রাণীনগর, আত্রাই উপজেলার সীমান্ত এলাকা হয়ে আত্রাই নদীতে ও সিংড়ার গুড় নদে মিলিত হয়েছে। এই নদীর মোট দৈর্ঘ্য ১০৫ কিমি।
অপরদিকে বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমের জেলা পঞ্চগড়ের আটোয়ারী ও পঞ্চগড় সদর উপজেলা ও পশ্চিমবঙ্গের সীমানার প্রায় কাছাকাছি আন্তর্জাতিক সীমান্ত ঘেঁষে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। দুটি নাগর নদীর মধ্যে বগুড়ার কাহালু উপজেলার একমাত্র এই নাগর নদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নদের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে কবিগুরুর জীবন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নওগাঁর কালীগ্রাম জমিদারী দেখার জন্য বজরা নিয়ে এই নদীপথে পতিসর যেতেন। পতিসরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারী বাড়িটি নাগর নদের ঘাটসংলগ্ন।
শত বছরেরও বেশীদিন আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নদীর যে বর্ণনা দিয়ে গেছেন তা বাস্তবে অনেক মিল রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ছিন্নপত্রে লিখেছেন নদী পর্যন্ত গড়ানে কাঁচা ঘাট, সেখানে কেউ কাপড় কাচছে, কেউ নাইছে, কেউ বাসন মাজছে, কোনো কোনো লজ্জাশীলা বধূ দুই আঙুলে ঘোমটা ঈষৎ ফাঁক করে কলসি কাঁখে জমিদার বাবুকে সকৌতুকে নিরীক্ষণ করছে। তার হাঁটুর কাছে আঁচল ধরে সদ্যযাত একটি তেল চিক্কন বিবস্ত্র শিশুও একদৃষ্টে বর্তমান পত্রলেখক সন্ববন্ধে নিবৃত্তি করছে। নদীতে যেখালে জল আছে সেখানে লক্ষ্য করলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বর্ণনার মতো সব মিল রয়েছে নদীর তীরবর্তী মানুষের জীবনা চরণে। এই নাগর নদীর ধারে পতিসর কাছারী বাড়িতে বসে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেছেন কবিতা, গান ও সাহিত্য।
কবিগুরুর সেই স্মৃতি বিজরীত নাগর নদের হচ্ছেনা কোনো পরিচর্যা। শিবগঞ্জ, দুপচাঁচিয়া ও কাহালু উপজেলার সীমান্ত রেখা দিয়ে প্রবাহিত এই নাগর নদের অংশেই কোথাও ইটভাটা, কোথাও স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে অবৈধভাবে। আর নদীর পানি কমার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে শুরু হয় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও মাটিকাটার কাজ। কাহালু উপজেলার বিভিন্ন অংশ ঘুরে লক্ষ্য করা গেছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজরীত এই নাগর নদে আগের মত থাকেনা পানি।
নদীতে অধিপত্য অবৈধ দখলকারীদের। নদীর অনেক অংশ কচুরিপানায় ঢেকে গেছে। নদীর কোন অংশ শুকনা আর কোন অংশে পানি আছে তা বুঝবার মতো কোনো উপায় নেই। আবার কোথাও নদীর শুকনো অংশে চাষাবাদও করা হচ্ছে। এই নদীতে আগে নৌকা চললেও কাহালু উপজেলার অংশ জুড়ে নদীতে আর দেখা মিলেনা নৌকার।
স্থানীয়দের মতে কবিগরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজরীত এই নদীটি খনন ও পরিচর্যার মাধ্যমে আগের মত জৌলস ফিরে আনা হোক। অবৈধ ভাবে নদী থেকে মাটিকাটা ও বালু উত্তোলন বন্ধ করাসহ অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদ করা জরুরী প্রয়োজন।
Leave a Reply