কাহালু (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ আজ ১৩ ডিসেম্বর বগুড়ার কাহালু উপজেলায় হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এইদিন মুজিব বাহিনীর থানা কমান্ডার অধ্যক্ষ হোসেন আলীর নেতৃত্বে কাহালু হানাদার মুক্ত হয়।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া তথ্যমতে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পরই কাহালুতে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে পাকবাহিনির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাার চেষ্টা করা হয়। এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রশক্ষিণ নিতে এখানকার মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের বিভিন্ন প্রশক্ষণ কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে ভারতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর এই জনপদে বগুড়া জেলা কমান্ডার এবিএম শাহজাহান ও কাহালু থানা অধ্যক্ষ হোসেন আলীর নেতৃত্বে বিভিন্ন শেল্টারে থেকে পাকবাহিনি ও তাদের দোসর রাজাকার ক্যাম্পে বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্রমণ শুরু করেন।
কাহালুর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উল্লেখযোগ্য আক্রমণ ছিল দুপচাঁচিয়া থানা আক্রমণ, তালোড়া রেল স্টেশন আক্রমণ, কুন্দুকগ্রাম টেলিফোন এক্সচেঞ্জ আক্রমণ, পাঁচপীর রেলব্রিজ আক্রমণ, বামুজা সম্মুখ যুদ্ধ, শীতলাই ও উলট্ট রেলব্রিজ আক্রমণ ও শিকড় যুদ্ধ। এভাবেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনির আক্রমণে পাকবাহিনী এই জনপদে দিশেহারা হয়ে পড়ে। নিশ্চিত পরাজয় জেনে পাকবাহিনী কাহালু থেকে পালাতে শুরু করে। ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর কাহালুর মুক্তিযোদ্ধারা কাউরাস-মালিবাড়ী শেল্টারে থাকার সময় গভীর রাতে তাদের কাছে খবর আসে পাকসেনারা কাহালু থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।
১৩ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা কাউরাস-মালিবাড়ী থেকে পাঁচপীর হয়ে রেললাইনের উপর দিয়ে কাহালুর দিকে আসতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা ফায়ার করতে করতে কাহালুতে প্রবেশ করার সময় সাধারণ মানুষ আনন্দ উল্লাসে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাহালু থানায় প্রবেশ করে। মুক্তিযোদ্ধারা কাহালুতে প্রবেশের টের পেয়ে পাকবাহিনি পালাতে শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা থানায় প্রবেশের পর পাকবাহিনি ও তাদের দোসর রাজাকার ও দালালদের কাহালু থানায় ধরে আনে নির্যাতিত পরিবারের সদস্যরা। সেদিন বিক্ষুব্দ জনতার গণপিটুনীতে প্রায় ৭০/৮০ রাজাকার ও দালাল মারা গেছে। কাহালু থানা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পথে জনতা দলছুট এক পাকসেনাকে জিয়াখুর এলাকায় ধান বহনের ব্যাঙ দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে। পাকসেনা ও রাজাকারদের মারার পর সেদিন অধ্যক্ষ হোসেন আলী কাহালু থানাকে হানাদার মুক্ত ঘোষনা করা হয়।হানাদাার মুক্ত ঘোষনার একদিন পর ১৪ ডিসেম্বর বগুড়ার দিক থেকে কাহালুতে এসে মেজর জাকির হোসেনসহ ১৭ জন পাকসেনা অস্ত্রসহ অধ্যক্ষ হোসেন আলীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
হানাদার মুক্ত দিবস পালন উপলক্ষে আজ উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা কালবেলাকে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ মেরিনা আফরোজ। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে র্যালী, আলোচনা সভা ও উপজেলা প্রশাসনের প্রকাশনা ও কালবেলার কাহালু প্রতিনিধি মুনসুর রহমান তানসেনের সম্পাদনায় ”স্মৃতিকথায় কাহালুর ’৭১” গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হবে।
Leave a Reply