মুনসুর রহমান তানসেন কাহালু থেকেঃ চলতি ভরা বর্ষা মৌসুম জুড়েই প্রকৃতি বড়ই বিরূপ। মাঝে-মধ্যে মেঘের গর্জনে বৃষ্টিপাত হলেও বগুড়ার কাহালু উপজেলায় কোনভাবেই কমছে-না গরমের তীব্রতা। তার উপর বিদ্যুতের লোড সেডিংয়ে মানুষের অস্বস্তি এখন চরমে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট আর গরমে তীব্রতায় ওষ্ঠাগত মানুষের এখন একমাত্র ভরসা কাহালুর পাখার গ্রামের তালপাতার বিভিন্ন প্রকারে হাতপাখা।
বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের আড়োলা আতালপাড়া ও যোগীর ভবন গ্রামে এই পাখাগুলো তৈরী করা হয়। এই গ্রামগুলোর নারী-পুরুষ ও শিশুরা পর্যন্ত পাখা তৈরীতে খুবই দক্ষ। এখানে তৈরী পাখাগুলো দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করা হয়। করোনার মধ্যে এই কাজে কিছুটা ভাটা পড়লেও চলতি মৌসুমে বেশ জমে উঠেছে পাখা তৈরীর কাজ। পাখা তৈরীকারকরা বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীদের পাখার চাহিদা মিটাতে খুবই ব্যাস্ত হয়ে পড়েন।
সম্প্রতি জাতীয়ভাবে বিদ্যুৎ সমস্যা আর গরমের তীব্রতায় জনজীবনে এক অস্বস্তিকর অবস্থা। যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে গরমের তীব্রতায় প্রশান্তি জন্য এসি ও বৈদ্যুতিক পাখার উপরে অধিকাংশ মানুষ নির্ভরশীল। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভালো-মন্দের বিষয়টি বিবেচ্য নয়। কাহালুর পাখার গ্রামের মানুষগুলো তাদের পূর্ব-পুরুষদের আমল থেকেই পাখা তৈরীর কাজ করেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। আশ্বিন মাস থেকে পৌষ পর্যন্ত ৪ মাস বাদে ৮ মাসই এখানে পাখা তৈরীর কাজ চলে। মোটামুটিভাবে এই পেশার উপর উল্লেখিত পাখার গ্রামগুলোর প্রায় ২০০ পরিবার নির্ভরশীল।
পাখা তৈরীকারকরা জানান, পাখা তৈরীর জন্য তালপাতাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তারা সংগ্রহ করেন। গরমের শুরু থেকেই তারা পাখা তৈরীর কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন। বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা আগাম অর্ডার দিয়ে তৈরী করে নেন তালপাতার পাখা। এখানে তৈরী ট্রাকে ট্রাকে পাখা নিয়ে যায় বিভিন্ন জেলাতে। গত দুই বছর করোনার কারনে পাখার ব্যবসা তেমন না হলেও চলতি সিজিনে গরম পড়ার সাথে সাথে পাখার চাহিদা বেড়ে গেছে অনেক বেশী।
এদিকে চলতি সিজিনে ভরা বর্ষা মৌসুমে মাঝে-মধ্যে বৃষ্টিপাত হলেও কোনভাবে কমছে-না গরম। তার উপর যোগ হয়েছে বিদ্যুতের লোড সেডিং। বিরূপ আবহাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে তাপদাহে অস্বস্তিতে জনজীবন। যারফলে পাখার গ্রামগুলোতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুঁটে আসছে ব্যবসায়ী পাখা কেনার জন্য। আগের চেয়ে পাখার মুল্য অনেকটা বেশী হলেও বেশী দামেই কিনছে পাখা।
আড়োলা আতালপাড়ার পাখা তৈরীকারক মজিবর জানান, প্রকারভেদে এখানে আগে পকেট পাখা ও ঘুরকি পাখা বিক্রি হয়েছে ৮ টাকা থেকে উর্ধে ১০ টাকায়। বর্তমানে এই পাখাগুলোই ১৫ টাকা থেকে ১৮ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। তারপরেও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এই গ্রামে কারো বাড়িতে পাখা মজুদ নেই। মোকলেছার জানান, ব্যবসায়ীদের আগাম অডারি পাখা তৈরী করতেই তিনি হিমিশিম খাচ্ছেন। সোহেল রানা জানান, গরম বেড়ে যাওয়া ও বিদ্যুৎ সমস্যা দেখা দেওয়ার পর থেকে তালপাতার পাখার চাহিদা বেড়েছে অনেক।
অপরদিকে সাধারণ মানুষের মতে বিরূপ আবওয়ার মধ্যে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। সব মিলিয়ে মানুষের মধ্যে এক অস্বস্তিকর অবস্থা। কোথাও ঠিকমত প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন-না মানুষ। বর্তমানে গরমের তীব্রতায় নাজেহাল জনজীবন। ক্ষণিকের প্রশান্তির জন্য এখানকার তালপাতার পাখাই এখন মানুষের বড় প্রয়োজন।
সোনাতলা সংবাদে লিখতে পারেন আপনিও। যে কোনও তথ্য ও ভিডিও দিন নিচের WhatsApp নাম্বারে। প্রয়োজনে আপনার নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হবে।
মোবাইল: ০১৭৭৪৬৫০৬৭১
E-mail: sonatalasangbad@gmail.com