1. sonatalasangbad@gmail.com : সোনাতলা সংবাদ :
শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
সোনাতলায় অগ্নীকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ভ্যান চালককে গরু দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান টুল্লু সোনাতলায় নাম্বার বিহীন ট্রাকের যন্ত্রাংশ আলাদা করার সময় দুইজন আটক বগুড়ায় ধান কেটে মজুরি না পাওয়ায় ৫ দিনমজুরের থানায় অভিযোগ গাবতলীর বাগবাড়ীতে শহীদ জিয়া কলেজ সরকারীকরণের দাবীতে লিফলেট বিতরণ কাহালুতে আওয়ামীলীগ নেতা গ্রেফতার কাহালুতে দুই ব্যবসায়ীকে ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা বগুড়ায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষা শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত সোনাতলায় ১০২ মুক্তিযোদ্ধাকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের চিঠি সারিয়াকান্দিতে জমিজমা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ৫ জন আহত সোনাতলায় এক সন্তানের জননীকে নিয়ে যুবক উধাও, থানায় অভিযোগ

কাহালুর তালপাতার পাখার গ্রামে বৈশাখের পাখা তৈরীতে ব্যস্ত সবাই

  • রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১৫৫
filter: 0; jpegRotation: 0; fileterIntensity: 0.000000; filterMask: 0; module:1facing:0; hw-remosaic: 0; touch: (-1.0, -1.0); modeInfo: ; sceneMode: Hdr; cct_value: 0; AI_Scene: (-1, -1); aec_lux: 69.0; hist255: 0.0; hist252~255: 0.0; hist0~15: 0.0;

মুনসুর রহমান তানসেন, কাহালু (বগুড়া)ঃ গ্রামীণ জনপদের একটি অতি পরিচিত নাম তালপাতা দিয়ে তৈরি ঐতিহ্যবাহী হাতপাখা। লোক সংস্কৃতির ঐতিহ্য এই হাতপাখার কদর বেড়ে যায় বাঙালির বিভিন্ন উৎসব ও তিথি-পর্বে। বাংলা সংস্কৃতির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখে। পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে কোথাও ৭ দিন আবার কোথাও মাসব্যাপী বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এই উৎসব ঘিরেই পাখা তৈরির কাজে ব্যস্ততা বেড়ে যায় পাখা শিল্পীদের।

বাঙালির অন্যতম উৎসব বৈশাখী মেলার জন্য বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের তালপাতার পাখার গ্রামগুলোতে হাতপাখা তৈরীর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাখা তৈরিকারকরা। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার নিখুঁত হাতের নকশায় তালপাতার পাখায় ফুটে তুলছেন গ্রামবাংলার লোকগাঁথা জ্যামিতিক নকশা। প্রচলিত প্রবাদ বাক্য ”শীতের কাঁথা, বর্ষার ছাতা আর গরমে পাখা” এটা ছিল বাঙালির চিরকালের সম্বল। গ্রামবাংলায় পাখা তৈরি ও ব্যবহারের ইতিহাস বহু প্রাচীন।

তালপাতার পাখা ব্যবহারের ইতিহাস বহু প্রাচীন হলেও এখনো গ্রাম বাংলার মানুষ গরমে শীতল বাতাস পাওয়ার অবলম্বন বলতে বোঝেন তালপাতার তৈরি হাতপাখা। চৈত্রের প্রখর রৌদ্র আর জৈষ্ঠের আম-কাঠাল পাকা গরম অথবা ভাদ্রের কাঠফাটা তাপদাহ আবহমান বাংলার চির পরিচিত। পীড়াদায়ক গরম থেকে স্বস্তির অন্যতম হাতিয়ার এই তালপাতার হাতপাখা।

যান্ত্রিক সভ্যতায় বাঙালির লোকগাঁথা অনেক শিল্পের মতো দেশের বিভিন্ন স্থানে বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম প্রতীক তালপাতার তৈরি হাতপাখা বিলুপ্তির পথে। এখন সবখানেই ব্যবহার হচ্ছে বৈদ্যুতিক পাখা। ধনীদের ঘরে চলে এসি। বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় কোথাও কোথাও চোখে পড়ে প্লাষ্টিকের হাতপাখা। তারপরেও তালপাতার পাখায় যাদের জীবনগাঁথা তারা এখনো টিকে রেখেছেন বাপ-দাদার আদিপেশা তালপাতার পাখা তৈরির কাজ। বংশ পরম্পরায় বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের আড়োলা, আতালপাড়া ও যোগীরভবন এলাকার প্রায় ৫০০ পরিবার এখনো তালপাতার পাখা তৈরি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন।

গরম পরার আগে থেকেই তারা শুরু করেন পাখা তৈরির কাজ। পাখা তৈরির জন্য তারা কার্তিক মাস থেকে সংগ্রহ করতে থাকেন তালপাতা, বাঁশ, রং, সুতাসহ পাখা তৈরির জিনিসপত্র। কার্তিক, অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাস ধরে তারা পাখা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মজুদ করে মাঘ মাস থেকে পাখা তৈরির কাজে হাত দেন। এই কাজ চলে প্রায় ভাদ্র মাস পর্যন্ত চললেও তাদের বড় টার্গেট থাকে বান্নির মেলা ও বৈশাখী মেলা। এই দুটি মেলাতেই মূলত এখানকার তৈরিকারকদের পাখা সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। বান্নি মেলা ও বৈশাখী মেলার অনেক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা পাখা তৈরী করে নেওয়ার জন্য আগাম অর্ডার দেন। বর্তমানে অর্ডারী পাখা তৈরী করতে তৈরীকারকরা অনেকটা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

আড়োলা উত্তরপাড়ার নুরবানু (৫৫) জানান, প্রতি সিজিনে তারা প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার নকশা করা ডাটি পাখা বিক্রি করেন। একটি ডাটি পাখায় তাদের খরচ হয় ৩০ টাকা। পাইকারি দরে একটি পাখা বিক্রি হয় ৫০ টাকায়। মিনা বেগম জানান, তার স্বামী বিদেশ থাকেন। সংসারের কাজের ফাঁকে তার শিশু সন্তান ও নিজেই পাখা তৈরী করেন। মনোয়ারা বেগম জানান, তিনি ঘুরকি পাখা তৈরি করেন। একটি পাখায় খরচ হয় ১৫ টাকা এবং বিক্রি করেন ২০ টাকায়। এছাড়াও এই গ্রামে হরতন পাখা ও পকেট পাখা তৈরী করা হয়। হরতন পাখা ১৫ টাকা ও পকেট পাখা ১০ টাকায় বিক্রি হয়।

বাপ-দাদার আদিপেশা যুগের পর যুগ বংশ পরম্পরায় ধরে রাখায় দেশের উপজেলার আড়োলা উত্তরপাড়া, আতালপাড়া ও যোগীরভবন এলাকা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কাছে পাখার গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এই পাখার গ্রামগুলো ঘুরলেই চোখে পড়বে অধিকাংশ বাড়ির লোকজনদের মধ্যে কেউ বাড়ির উঠানে কেউ ঘরের দুয়ারের সামনে বসে পাখা তৈরির কাজ করছেন। এখানে পাখা তৈরির ইতিহাস সবার অজানা থাকলেও তালপাতার পাখার গ্রামের প্রায় সকলেই বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই এই কাজ করে আসছেন। এখানে পরিবারের লোকজনের পাখা তৈরির কাজ দেখে শিশুরা পর্যন্ত পাখা তৈরির কাজে দক্ষ হয়ে উঠে। আবার অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বয়সের ভাড়ে নুয়ে পড়লেও তারা বসে নেই, ঘরে বসেই পাখা তৈরির কাজ করছেন।

এখানে সকলেই বাণিজ্যিকভাবে পাখা তৈরির কাজ করে থাকেন। একটু গরম পড়লেই এখানে ছুটে আসেন বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা। তারা অর্ডার দিয়ে এখান থেকে বিভিন্ন প্রকারের পাখা তৈরি করে নেন। পাখা তৈরির অর্ডার পেয়ে তা দ্রæত সরবরাহ করার জন্য এখানে একেক জন একেক ধরণের পাখা তৈরির কাজ ভাগ করে নেন। পাখা তৈরির জন্য ভাগ করে নেওয়া কাজের মজুরীও ব্যবসায়ীরা নির্ধারণ করে দেন। কেউ তালপাতা কেটে নিচ্ছেন, কেউ সুতো দিয়ে চাক বাঁধছেন আবার কেউ পাখার ডাটি লাগাচ্ছেন। কেউ কেউ রং তুলি দিয়ে নিখুঁতভাবে পাখায় নকশা করে রোদে শুকিয়ে নিচ্ছেন। এভাবেই প্রতিটি ঘরে ঘরে, বাড়ির উঠান ও আঙিনায় চলে পাখা তৈরির কাজ।

এখানকার পাখাশিল্পীদের তথ্যমতে, তারা প্রথমে পাতাসহ তাল গাছের ঢিঙ্গা নিজ এলাকা ছাড়াও রাজশাহী, নওগাঁ জেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কিনে বাড়িতে আনেন। বড় ডাটি পাখার জন্য ঢিঙ্গার কিছু অংশসহ মাপ অনুযায়ি কেটে নেন। বাঁকি পাতাগুলো পকেট পাখা, ঘুরকি পাখা ও হরতন পাখার জন্য কেটে নেন। ডাটি পাখার ডিজাইন করা অংশ ও অন্যান্য পাখার জন্য কেটে নেওয়া তালপাতা রোদে শুকিয়ে নেন। তারপর নির্ধারিত মাপে পাখা তৈরির ডিজাইন করা হয়।

এরপর বড় গামলায় পানির সাথে হলুদ মিশিয়ে ওই পানিতে ডিজাইন করা চাক বাঁধানো পাখা ভিজিয়ে নেয়ার পর সেগুলো আবার রোদে দিয়ে ভালো করে শুকিয়ে নেন। এভাবে শুকিয়ে নেয়ার পর পাখার চাক সুতো দিয়ে বেঁধে বিভিন্ন কালারের রং দিয়ে তুলির আঁচড়ে নকশা করেন। পাখাশিল্পীদের পাখার নকশায় ফুটিয়ে উঠে গ্রাম-বাংলার লোকজ ঐতিহ্য।

পাখার গ্রামগুলোর তৈরিকারকরা বংশ পরম্পরায় পাখা তৈরির কাজ করে আসলেও এখানে কখন কিভাবে পাখা তৈরির প্রচলন শুরু হয়েছে তা সঠিকভাবে কেউ বলতে পারেন না। স্থানীয়দের ধারণামতে যোগীর ভবন প্রাচীন আশ্রম ও মন্দিরে আগে বিভিন্ন দেশ থেকে সাধু-সন্ন্যাসী ও যোগীরা আসতেন। আশ্রম ও মন্দিরে হতো বার মাসে তের পার্বন। পূজা-পার্বন ঘিরে সেখানে বিভিন্ন দেশের অসংখ্য মানুষের সমাগম ঘটতো । বিভিন্ন দেশের লোকজনকে গরম থেকে স্বস্তি দিতেই তালপাতার পাখা তৈরির প্রচলন শুরু হয় এখানে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নিউজে সর্বশেষ

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট