মুনসুর রহমান তানসেন কাহালু (বগুড়া) থেকেঃ হাতির পায়ের বেড়ী আছে হাতি নেই , সংগীত ঘরে নেই বাদ্যযন্ত্রের ধ্বনি, জীর্ণদশা জমিদার বাড়ি এখন শুধুই স্মৃতি। বগুড়া শহর থেকে মাত্র ৬ কিঃ মিঃ পশ্চিমে কাহালু উপজেলার মুরইল মাদ্রাসার সন্নিকটে অবস্থিত সৈয়দ তোরাম আলী চৌধুরীর জমিদার বাড়ি।
এক সময় বগুড়া জেলায় বিভিন্ন পরগনা ছিলো। একেক পরগনায় একেক জমিদার ছিলেন। তাদের মধ্যে সৈয়দ তোরাব আলী চৌধুরীও ছিলেন একটি পরগনার জমিদার। তাঁর আমলে মুরইল এলাকার প্রজারা ছিলেন অনেক সুখে। এই তথ্য জানালেন পূর্ব-পুরুষদের কাছ থেকে গল্প শোনা অনেকে। জমিদার বংশের সৈয়দ আঃ গফুর মতি জানান, আমার দাদা সৈয়দ আঃ বাসেদ ছিলেন জমিদার বংশের লোক। তাঁর কাছে আমরা গল্প শুনেছি জমিদার সৈয়দ তোরাব আলী চৌধুরী ছিলেন একজন সংগীত প্রিয় মানুষ। তিনি নিজেও সংগীত চর্চা করতেন। তাঁর জমিদার বাড়িতে ছিলো সংগীত চর্চার জন্য বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র। সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজানোর ক্ষেত্রে তাঁর ছিলো ভালো দক্ষতা।
মুরইল মাদ্রাসার পশ্চিম পাশে একটি পুকুর। সেই পুকুরের পশ্চিম পাড়ে ছিলো সৌখিন জমিদার বাড়ি। জমিদার বাড়ির সাথেই ছিলো বংশীয় লোকজনের থাকার জন্য বাড়ি ও খাজনা আদায়ের কাচারী ঘর। বর্তমানে তিনটি আলাদা জমিদার বাড়ির আংশিক স্থাপনা থাকলেও সেগুলোর অবস্থা খুবই জীর্ণদশা। ভেঙ্গে গেছে ছাদ ও খসে পড়ছে চুন-সুরকির গাঁথা ইট। সেগুলো আবার গাছের লতাপাতায় ছেয়ে গিয়ে হয়েছে জঙ্গলের মত। জমিদার বাড়ির পাশেই বাস করেন জমিদারের নাতী সৈয়দ বাবু চৌধুরী । তাঁর বাসস্থান আংশিক টিন সেড (ইট) ও আংশিক মাটির ঘর। বর্তমানে জমিদারী সম্পত্তি ওয়াকফ স্টেটের অধিনে ও প্রজাদের নামে। শুধু এই জমিদার বাড়ির অংশটুকুই এখনো আঁকড়ে ধরে আছেন জমিদার বংশের প্রদ্বীব বাবু চৌধুরী।
এদিকে জমিদারের মাটির কাচারী ঘর অনেক আগেই মিশে গেছে মাটির সাথে। জমিদার বাড়ির দক্ষিণে ছিলো হাতিশালা। এখানে ছিলো বড় দুটি হাতি। সেই হাতি ও হাতিশালা আর নেই। তবে এখনো সেখানে স্মৃতি হিসেবে রাখা হয়েছে হাতির পায়ের বেড়ী ও শিকল। জমিদার বাড়ির পশ্চিম পাশে রয়েছে কয়েকশ বছর আগের একটি গাছ, কিন্ত কেউ বলতে পারেনা গাছটির নাম। তাই গাছটি অচিন গাছ নামে পরিচিত সবার কাছে। এই গাছের সাথেই উঁচু একটি মাঠ।
এলাকার লোকজনের মতে জমিদার বাড়ির দুটি হাতি মারা গেলে এই মাঠের মাটির নীচে পুঁতে রাখা হয়। কয়েকশ বছর আগের অচিন গাছটি নিয়ে রয়েছে নানা জনশ্রæতি। অনেক আগে গাছটি কাটার চেষ্টা করেও কেউ কাটতে পারেনি। যখন গাছের পাতা ঝড়ে তখন ২/৩ টি জোড়া লাগানো অবস্থায় মাটিতে পড়ে। গাছটির ডালে ডালে পরগাছা গজালেও দেখলে মনে হবেনা গাছটি কয়েকশ বছর আগের।
বগুড়ার ইতিহাস গন্থে উল্লেখ রয়েছে সৈয়দ তোরাব আলী মারা যান ১৮৬৮ খৃষ্টাব্দে। তিনি মারা যাওয়ার পূর্বে তাঁর সমুদয় সম্পত্তি জনসাধারণের উপকারর্থে ও দানকার্যের নিমিত্ত ওয়াকফ করে যান। পরর্তীতে ওয়াকফ সম্পত্তির মোত্তায়াল্লি করা হয় জমিদার বংশের সৈয়দ আঃ মজিদকে। তিনি নাবালক থাকায় ওয়াকফ সম্পত্তির কার্যাদি পালনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় রঘুনাথ নামক এক কায়স্থকে। আঃ মজিদের পর তাঁর ভ্রাতা সৈয়দ রব চৌধুরী মোত্তায়াল্লি হন। জানা গেছে বর্তমানে হাসেম আলী চৌধুরী ওয়াকফ সম্পত্তির মোত্তায়াল্লি।
সৈয়দ তোরাব আলী চৌধুরী জনসাধারণের উপকারর্থে ও দানকার্যের জন্য কয়েকশ বিঘা জমি রেখে গেলেও বর্তমানে তাঁর জমিদার বাড়ির চিহৃ মুছে যাওয়ার পথে। তারপরেও তোরাব আলী চৌধুরীর স্মৃতি বিজরীত বাড়িটি দেখতে আসেন দুর-দুরান্ত থেকে অনেক মানুষজন। স্থানীয়দের দাবী বিভিন্ন এলাকার দর্শনার্থীদের জন্য এই জমিদার বাড়ির স্থাপনাগুলো সংস্কার করা উচিত।
কাহালুতে গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার
কাহালু (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ গত বৃহস্পতিবার রাত ১১ টার দিকে বগুড়ার কাহালু উপজেলার পিলকুঞ্জ দক্ষিণপাড়া থেকে ২০০ গ্রাম গাঁজাসহ মাসুদ রানা (২৩) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত মাসুদ উল্লেখিত গ্রামের গোলাম রব্বানীর পুত্র। পুলিশ জানান, মাসুদের বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।
Leave a Reply