কাহালু (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ বগুড়ার কাহালু উপজেলার নারহট্ট ইউনিয়নের লহড়াপাড়া ও উলখার গ্রামের স্বঘোষিত শাসক নানা অপকর্মের হোতা রোস্তম আলী (৪২) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার লহরাপাড়া গ্রামের আঃ জব্বারের দায়ের করা একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে পর সোর্স সন্দেহে রোস্তম বাহিনীর লোকজন ওই গ্রামের হায়দার আলী, আকবর আলী ও সেলিমের ঘরবাড়িতে হামলা ও ভাংচুর চালায়।
হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। হামলায় আহত হয়ে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে হায়দার আলী (৪৫) তার কন্যা হাফিজা কুমকুম (১৭)। রোস্তমকে গ্রেফতারের পর তার বাহিনীর লোকজনের হুমকিতে গ্রাম ছেড়ে বেশ কয়েকজন পালিয়ে গেছে বলেও জানা গেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর সহাকারি পুলিশ সুপার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত (নন্দীগ্রাম সার্কেল) লহড়াপাড়া পরিদর্শনে গেলে রোস্তম বাহিনীর নির্যাতনের শিকার অনেকেই তাদের কষ্টের কথা জানান। নির্যাতনের শিকার হওয়া মানুষের অভিযোগ সন্ত্র্সাী রোস্তম, বাদল ও তাদের বাহিনীর লোকজনের কথা না শুনলে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন তারা। শুধু নির্যাতন নয় রোস্তম বাহিনীর বেঁধে দেওয়া চাঁদা সময়ের মধ্যে না দিলে বসতবাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। এমনকি বাড়ির জিনিসপত্র, গরু ও জমির ধান কেটে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে রোস্তম বাহিনীর লোকজন। পুলিশ তথ্যমতে রোস্তমের বিরুদ্ধে থানায় বর্তমানে মোট ৫ মামলা ও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সুত্রে পাওয়া তথ্যমতে রোস্তমের বিরুদ্ধে আদালতে আরও তিনটি মামলা রয়েছে।
রোস্তমের নির্যাতনের শিকার লহুড়াপাড়ার লালমিয়া জানান, রোস্তম ও বাদলের কথামত গ্রামের কেউ না চললে তার উপর রোস্তম বাহিনীর নির্যাতন চলে। আমি রোস্তমের কথামত না চলায় তার বাহিনীর লোকজন আমার তিনবিঘা জমির ধান কেটে নিয়ে গেছে এবং শালিসে আমাকে আরও ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে। রোস্তম গ্রেফতারের পর তার বাহিনীর হামলা শিকার আহত হায়দার আলী মোবাইল ফোনে জানান, পুলিশের সোর্স সন্দেহে আমার বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর চালিয়ে অনেক টাকার ক্ষতিসাধন করে। বাঁধা দেওয়ায় ঘর থেকে প্রকাশ্যে টেনে-হেঁচড়ে বাহির করে আমার মাথা মাটিয়ে দেয় এবং আমার মেয়েকে বেদম মারপিট করে।
রোস্তমের হায়দারের ছেলে হুদায়ফা জানান, রোস্তমের কথামত না চললে সেই লোক বাড়িতে বাস করতে পারেনা। অনেকদিন আগে আমাদের বাড়ি থেকে তার বাহিনীর লোকজন গরু পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেছে। রোস্তম বাহিনীর ভয়ে পালিয়ে থাকা লহড়াপাড়ার মামুন মোবাইল ফোনে জানান, রোস্তম বাহিনীর ভয়ে আমার ভাই হারুনসহ বেশ কয়েকজন এখনো গ্রাম ছাড়া।
রোস্তম বাহিনীর ভয়ে লহড়াপাড়া শিলকঁওড় গ্রামে বাড়ি করেছেন লালমিয়া। তার স্ত্রী সাহেরা খাতুন জানান, রোস্তম ও তার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে গ্রাম ছেড়ে এসে শিলকঁওড় এসে বাড়ি করেছি। গ্রামে থাকাকালে রোস্তমের দাবীকৃত ৫০ হাজার টাকা চাঁদা না দেওয়ায় নারী হিসেবে আমিও রেহায় পায়নি। আমাকে কয়েকবার মারপিট করেছে রোস্তম, বাদল ও সোহরাব। প্রায় তিন বছর আগে থেকে রোস্তম বাহিনীর ভয়ে অনেকে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে। রোস্তম বাহিনী বেপোয়ারা হয়ে উঠলে তার ভয়ে বিভিন্ন সময় গ্রাম থেকে পালিয়ে গেছে অনেকে। আপনজন কেউ মারা গেলেও তাদের মাটি দিতে আসতে পারেনা আমার স্বামীসহ অনেকে। রোস্তম-বাদল স্বঘোষিত শাসক আমাদের এলাকায়। তাদের কথা না শুনলেই গজব নেমে আসে আমাদের উপর।
নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, রোস্তমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় আমার বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করে সব কিছু লুট করেছে তার বাহিনীর লোকজন। বাধ্য হয়ে তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ তুলে নিতে হয়েছে। কেউ অভিযোগ করলে তার আর রক্ষা নেই রোস্তম ও তার লোকজনের হাত থেকে। তার কথার বাহিরে গেলেই বাড়ি থেকে গরু নিয়ে বিক্রি করে ও জমির ধান কেটে নিয়ে যায় তারা।
গত মঙ্গলবার রোস্তমসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। সেই মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে রোস্তমসহ তার লোকজন দেশীয় অস্ত্রে নিয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর বাদী আঃ জোব্বারের বাড়িতে হামলা করে ২ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে। তার ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর জন্য বাড়িতে রাখা ৫ লাখ টাকা লুট করে আসামীরা। বাঁধা দিতে গেলে বাদীর স্ত্রীকে মারপিট করে শ্লীলতাহানীর উদ্দেশে স্পর্শ কাতর জায়গায় হাত বোলায়।
কাহালু থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাহমুদ হাসান জানান, আমি এখানে আসার পর ভোক্তভোগীরা মৌখিক অভিযোগ দিলেও কেউ তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ চাইয়া। অবশেষে তার বিরুদ্ধে সুনিদ্রিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার পরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সহকারী পুলিশ সুপার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত (নন্দীগ্রাম সার্কেল) নাজরান রউফ জানান, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিষয়টি এসপি স্যারকে জানিয়েছি। ভোক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
Leave a Reply