গাবতলী (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হলো বগুড়া গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা। মেলাকে আকর্ষণীয় সুন্দর ও বর্ণীল সাজে সাজিয়ে ছিল মেলা কর্তৃপক্ষ। মেলায় মুল আকর্ষণ ছিল ৩০ থেকে ৪০ কেজি ওজনের বেশ কয়েকটি নিষিদ্ধ বাঘাইর মাছ। পরে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বাঘাইড় মাছগুলো জব্দ করেছে। আজ বৃহস্পতিবার মহিষাবান ত্রিমোহনী গ্রামে অনুষ্ঠিত হবে বউমেলা।
একাধিক সূত্র জানায়, গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দরের পূর্বধারে গাড়ীদহ নদী ঘেঁষে স্থানীয় সন্ন্যাসী পূঁজা উপলক্ষে প্রায় সাড়ে ৪’শ বছর পূর্ব থেকে সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানা জমিতে একদিনের জন্য এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ মেলা গ্রামীণ সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।
বিশেষ করে বিশাল আকৃতির মাছ ও মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের প্রথম অথবা বাংলা সনের মাঘ মাসের শেষ বুধবার এই মেলাটি হয়ে থাকে। এ মেলাকে ঘিরে মেলার আশপাশ গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ ও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অতিথিরা এসে এ মেলার উৎসবে মেতে ওঠে। মেলাটি একদিনের হলেও চলে তিনদিন পর্যন্ত।
মেলায় কয়েক লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটেছে। ওই এলাকার একাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, ঈদ বা অন্য কোন উৎসবে মেয়ে-জামাই কিংবা নিকট আত্মীয়দের দাওয়াত না দিলেও চলে কিন্তু পোড়াদহ মেলায় সবাইকে দাওয়াত দিয়ে ধুমধাম করে খাওয়াতে হয়-যা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এ মেলা জামাই মেলা বলেও পরিচিত হয়েছে। মেলায় মূল আকর্ষণ হলো দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছ, মিষ্টি আর কাঠের তৈরি ফার্নিচার।
বুধবার ভোর রাতে মেলায় নিয়ে আসা হয় বিশাল আকৃতির বেশ কয়েকটি সামুদ্রিক বাঘাইর, কাতলা, বোয়াল, ব্লাডকাপ, সিলভার, আইড়, গুজি মাছসহ নানা প্রজাতির মাছ। মাছ ব্যবসায়ী বিকাশ চন্দ্র জানান, তিনি এবার প্রায় ২২৫ মন বড় মাছ এনেছেন, বিক্রিও হচ্ছে ভালো দামে। এছাড়া ৩০ কেজির বেশি ওজনের কাতলা, বোয়াল ও ব্লাডকাপ এসেছে অনেক।
ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা জানান, ভোরে মাছের আড়তগুলোতে ব্যাপক ভিড় থাকে। খুচরা বিক্রেতারা এসব মাছ কিনে নিজ নিজ দোকানে নিয়ে যান এবং ভালো দামে দিনভর বেচাকেনা করেন। ৩০কেজি ওজনের বাঘাইর ১৫’শ টাকা কেজি, ২০ কেজি ওজনের কাতলা ১২’শ টাকা কেজি, ১০ কেজি ওজনের রুই ৬’শ টাকা কেজি, ৩০কেজি ওজনের বোয়াল ১৪’শ টাকা কেজি, ১০ কেজি ওজনের আইড় ১৮’শ টাকা কেজি, ৮/১০ কেজি ওজনের গুজি মাছ ২২’শ টাকা কেজি, বড় সিলভর, ব্লাডকাপ, পাঙ্গাস ছিল ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা কেজি।
মাছের পাশাপাশি বাহারি মিষ্টি এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ। এখানে পাওয়া যায় মাছ আকৃতির মিষ্টি, রসগোল্লা, সন্দেশ, জিলাপি, নিমকি, তিলের নাড়ু, খই ও শুকনা মিষ্টি। মিষ্টি ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ জানান, তিনি এবার ১৫ কেজি ওজনের ৪টি মিষ্টি তৈরি করে এনেছেন। ১০কেজি ওজনের উপরে প্রতিটি মিষ্টি ৬’শ টাকা কেজি দরে বিত্রি হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র, কৃষি সামগ্রী, বড়ইকুল, আচার ও খাদ্য দ্রব্য হাট-বাজারের মতোই ক্রয়বিক্রয় হয়। পোড়াদহ মেলাকে কেন্দ্র করে নতুন জামাই-বউকে দাওয়াত দেওয়া একটি প্রচলিত রীতি। স্থানীয় মহিষাবান মন্ডলপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের বলেনন, তিনি তার মেয়ে ও জামাইকে দাওয়াত দিয়েছেন এবং তাদের জন্য মাছ ও মিষ্টি কিনেছেন। জামাইরাও মাছ-মিষ্টি কিনে শ্বশুর বাড়ি নিয়ে আসছেন।
সন্ন্যাসী পূঁজা কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রায় সাড়ে ৪’শ বছর আগে মেলাস্থলে একটি বিশাল বটগাছ ছিল। একসময় এখানে এক সন্ন্যাসী আশ্রম গড়ে তোলেন। পরে এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে পূণ্যস্থানে পরিণত হয়। তখন থেকেই প্রতি বছর এখানে বিশাল মেলা বসে আসছে। যার নাম করণ করা হয় পোড়াদহ মেলা। স্থানীয় মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেলা কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মজিদ মন্ডল বলেন, গোটা অঞ্চল উৎসবের আমেজে ভরে উঠেছে।
এ ব্যাপারে থানার ওসি আশিক ইকবাল বলেন, পোড়াদহ মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মেলায় নাগরদোলা, চরকি, সার্কাসসহ শিশুদের জন্য বিভিন্ন রকমের বিনোদনের ব্যবস্থা ছিলো। অপরদিকে পোড়াদহ মেলা উপলক্ষে আশপাশে যেমন দূর্গাহাটা, বাইগুণী, পেরীর হাট, পাঁচমাইল, দাঁড়াইল, নাড়–য়ামালা হাটসহ বিভিন্নস্থানে মেলা বসানো হয়েছিল। আজ বৃহস্পতিবার মহিষবান ত্রিমোহনী গ্রামে অনুষ্ঠিত হবে বউমেলা।
Leave a Reply