মুহাম্মাদ আবু মুসাঃ ঢাকঢোল পিটিয়ে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় আজ ১২ফের্রুয়ারী/২৫ বুধবার পূর্ব বগুড়া তথা গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ সন্ন্যাসী ও জামাই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মেলা আয়োজকরা। সরগরম হয়ে উঠেছে মেলার আশপাশের গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে আতœীয় স্বজনের।
উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের অর্ন্তগত গোলাবাড়ী বন্দর সংলগ্ন প্রায় চারশত বছর পূর্বে থেকে স্থানীয় সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে গাড়ীদহ নদী ঘেঁষে সম্পূর্ন ব্যক্তি মালিকানা জমিতে একদিনের জন্য মেলাটি বসে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ মেলায় এসে ক্রয়-বিক্রয় করে। মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে আতœীয় স্বজন এসে সমবেত হয়।
ঈদ বা কোন উৎসবে জামাই-মেয়েসহ অন্যান্য আতœীয় স্বজনদের দাওয়াত না দিলেও তেমন কোন সমস্যা নেই। তবে মেলা উপলক্ষে দাওয়াত দিতেই হবে, যা রেওয়াজে পরিনীত হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই এলাকার প্রতিটি বাড়ীতে আতœীয় স্বজন এসেছে। যা মেলার কয়েক দিন পর্যন্ত আতœীয় স্বজনের ধুমধাম চলবে।
মেলাটি একদিনের জন্য হলেও ওই এলাকায় মেলার আমেজ থাকে সপ্তাহ ব্যাপী। মেলা উপলক্ষে খরচার জন্য নি¤œ ও মধ্যবিত্ত পরিবার বছরের শুরু থেকে মাটির ব্যাংক অথবা অন্য কোথাও সুজুগ মতে অল্প অল্প করে টাকা-পয়সা জমা রেখে মেলার সময় বের করে। এই মেলাকে ঘিরে উপজেলার দুর্গাহাটা, বাইগুনি, সুবোধ বাজার এবং দাড়াইল বাজারসহ কয়েকটিস্থানে অবৈধভাবে মেলা বসানো হয়। ওই স্থানে অবৈধভাবে মেলা বসানোর কারনে চরম হুমকির মূখে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ সন্ন্যাসী ও জামাই মেলাটি।
পোড়াদহ মেলায় প্রসিদ্ধ হলো বড় বড় মাছ, হরেক রকম মিষ্টি, কাঠ বা ষ্ঠীলের ফার্নিনচার, বড়ই (কুল), কৃষি সামগ্রীসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ও খাদ্য দ্রব্য হাট-বাজারের ন্যায় কেনা-বেচা করা হয়। এ ছাড়া বিনোদনমূলক সার্কাস, মোটর সাইকেল-কার, নৌকা খেলা ও নাগোরদোলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলাটি জন্মের পর থেকে মহিষাবান গ্রামের মন্ডল পরিবার পরিচালনা করে আসছেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মেলার লাইসেন্স দেয়া হয়। বাংলার প্রতি বছরের মাঘ মাসের শেষ অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার মেলাটি হয়ে থাকে। মেলাটি আজ বুধবার হলেও কয়েক দিন আগে থেকে দোকান ঘর স্থাপন করা হয়েছে। তৈরী করা হয়েছে হাজার হাজার মণ মিষ্টি। যা কয়েক দিন আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা মিষ্টি বিক্রয় করেছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে মন্ডল পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং মেলার পরিচালক আব্দুল মজিদ মন্ডলের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ সন্ন্যাসী ও জামাই মেলা স্থানীয় সন্ন্যাসী পূজা উদ্যাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা এবং জমির মালিকরা ইতিমধ্যে মেলার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান জানান, ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষে প্রশাসনের সার্বিকভাবে সহযোগিতা রয়েছে।
এ বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশিক ইকবাল এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও পোড়াদহ মেলায় আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। তবে মেলায় অবৈধ কোন কিছু করতে দেয়া হবে না।
অপর দিকে আজ বুধবার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা শেষ হলে আগামী কাল বৃহস্পতিবার বউ মেলা বসানো হবে।
Leave a Reply