বায়েজীদ, গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশের সাড়াশী অভিযানে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের এক নারীসহ ৫ সদস্য গ্রেফতার হয়েছে । পৃথক দুটি ঘটনায় ৫ জন কে গ্রেফতার ও দুই ভিকটিমকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা ৪ জন গাইবান্ধা জেলার ও ১ জন ঢাকা জেলার বাসিন্দা। ভিকটিমদ্বয় গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার বাসিন্দা। প্রতারকচক্র গ্রেফতারের পৃথক অভিযানের বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিফ্রিং এর মাধ্যমে আজ রবিবার সকালে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানানো হয়।
প্রেস বিফ্রিং কালে জেলা পুলিশ সুপার মোঃ কামাল হোসেন গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশের উক্ত সাড়াশী অভিযানের বিষয়ে সার্বিক তথ্য তুলে ধরেন। এসময় তিনি জানান পৃথক ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ থানা দুটি মামলা দায়ের ও ৫ জন আসামীকে গ্রেফতার ও দুইজন ভিকটিম কে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরো জানান জেলা জুড়ে যে কোন ধরণের অপরাধ দমাতে কাজ করছে জেলা পুলিশ। সমাজে সকল ধরণের অপরাধ দমাতে পুলিশ কে সহযোগীতা করার আহবান জানান পুলিশ সুপার মোঃ কামাল হোসেন। এসময় জেলা পুলিশের সনিয়ির সহকারি পুলিশ সুপার উদয় কুমার সাহা, গোবিন্দগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ ইজার উদ্দিন সহ জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিতি ছিলেন।
প্রথম ঘটনা সম্পকেৃ জানা যায়,গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলা কুচুয়া গ্রামের বাসিন্দা ভিকটিম মোঃ আপেল মাহমুদ (৩০) এর সাথে গ্রেফতারকৃত আসামী ১। মোঃ রুবেল শেখ ২। মোঃ জুয়েল আকন্দ (২৬) এর সহিত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গত ১৫ দিন আগে পরিচয় হয়। তারপর পরস্পরের মাঝে সু-সম্পর্ক তৈরি হলে, সেই সুবাদে আসামীদ্বয় ভিকটিমকে গত ৩ মার্চ শনিবার সন্ধ্যা অনুমানিক ৭ ঘটিকার সময় গোবিন্দগঞ্জ থানা এলাকায় মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে ডেকে নিয়ে আসে। তারপর ভিকটিমকে সাথে নিয়ে। বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরির পর একপর্যায়ে গোবিন্দগঞ্জ থানার চারমাথা মোড়ের নুর জাহান আবাসিক হোটেলে ২০১ নং রুমে আটক করে রাখে। সেখানে আসামীকে প্রতারনা মূলকভাবে তার নগ্ন ছবি ও অশ্লীল ভিডিও তৈরি করার হুমকি প্রদর্শন করে এবং নগদ ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। উক্ত দাবিকৃত চাঁদার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠানোর জন্য ভিকটিমকে দিয়ে তার পরিবারের লোকজনদের উর চাপ প্রয়োগ করে। তারপর টাকা দিতে দেরি হওয়ায় আসামীরা ভিকটিম আপেলকে মারপিট করে এবং নগদ ১৮,০০০/- টাকা ও একটি মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। ভিকটিম আসামীদের দাবিকৃত টাকার জন্য পরিবারের লোকজনদের জানালে তার পরিবার গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশের শরনাপন্ন হইলে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে জেলা পুলিশ সুপার মোঃ কামাল হোসেন এর সার্বিক দিক নির্দেশনায় ও সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার উদয় কুমার সাহার নেতৃত্বে থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইজার উদ্দিন,ওসি তদন্ত বুলবুল ইসলাম, এসআই/ প্রলয় কুমার বর্মা, এসআই/মোঃ রাশেদুল ইসলাম, এএসআই/ মোঃ রেজাউল করিম ও সঙ্গীয় ফোর্স সহ অভিযান পরিচালনা করে ভিকটিম মোঃ আপেল মাহমুদকে নুরজাহান আবাসিক হোটেল থেকে উদ্ধার এবং আসামীদের গ্রেফতার করে।
দ্বিৃতীয় ঘটনার বিবরণে জানা যায়,গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার দক্ষিণ কুঠির গ্রামের বাসিন্দা ভিকটিম মোঃ জহুরুল ইসলাম (৩১) এর প্রায় ১০ দিন পূর্বে আসামী মোছাঃ মেহনাজ আক্তার সাথী এর সাথে “ইম্যু” এর মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে ভিকটিমের সাথে আসামী মোছাঃ মেহনাজ আক্তার সাথীর প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। সেই সুবাদে আসামী মেহনাজ আক্তার সাথী ভিকটিমকে মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে প্রতারনামূলক ভাবে গোবিন্দগঞ্জ থানা এলাকায় ডেকে নিয়ে আসে। ভিকটিম আসামীর কথামত ৩ মার্চ শনিবার সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে সাত ঘটিকার সময় গোবিন্দগঞ্জ থানাধীন মায়ামণি হোটেলের সামনে আসে। ভিকটিমকে আসামী মোছাঃ মেহনাজ আক্তার সাথী কৌশলে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরার পর তার ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। তারপর সেখানে অপর আসামী মোছাঃ মেহনাজ আক্তার সাথীর স্বামী মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ এবং তার সহযোগী আসামী মোঃ ফাহিম ভিকটিমকে জিম্মি করে ঘরের ভিতর আটক করে রেখে এলোপাথারী মারপিট করে এবং ২ লাখ টাকা দাবি করে। ভিকটিমের নিকটে থাকা নগদ ১৫ শত টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। ভিকটিম আসামীদের টাকা দাবির বিষয়টি মোবাইল ফোনে পরিবারের লোকজনদের জানালে ভিকটিমের পরিবারের লোকজন দুঃচিন্তাগ্রস্থ হয়ে আদি-অন্ত না পেয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশের শরনাপন্ন হলে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে এক সাড়াশী অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গলমারা মৌজাস্থ ডায়াবেটিস হাসপাতালের পিছনে আসামীর ভাড়া বাসা থেকে আসামীদের হেফাজত থেকে ভিকটিম মোঃ জহুরুল ইসলামকে উদ্ধার এবং আসামীদের গ্রেফতার করেন।
পৃথক ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ৫ জন হলো প্রথম ঘটনায় গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তরফমনু গ্রামের ময়নুল শেখ এর ছেলে ১। মোঃ রুবেল শেখ (২৫) ও একই উপজেলার বামনকুড়ি গ্রামের জহুরুল আকন্দের ছেলে ২। মোঃ জুয়েল আকন্দ (২৬)। দ্বিতীয় ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ঢাকা জেলার ধামরাই থানার মুরারচর গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে ১। মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ (৩০),গাইবান্ধা সদর পৌর এলাকার ডেভিড কোম্পানিপাড়ার রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মোঃ ফাহিম (২২) ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার আয়ভাঙ্গি গ্রামের মুনছুর আলীর মেয়ে ও গ্রেফতারকৃত আরিফের স্ত্রী ৩। মোতা মেহনাজ আক্তার সাথী (২৮) (আরিফুল ইসলাম এবং মেনহাজ আক্তার সাথী দম্পতি)।
সোনাতলা সংবাদে লিখতে পারেন আপনিও। যে কোনও তথ্য ও ভিডিও দিন নিচের WhatsApp নাম্বারে। প্রয়োজনে আপনার নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হবে।
মোবাইল: ০১৭৭৪৬৫০৬৭১
E-mail: sonatalasangbad@gmail.com