1. sonatalasangbad@gmail.com : সোনাতলা সংবাদ :
শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:১০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গাবতলীর মহিষাবানে ফুটবল খেলায় ফতেহ আলী বাজার মৎস্য সমিতিকে হারিয়ে কলোনী বাজার বিজয়ী বগুড়ায় আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফাইনাল ফুটবল টুর্নামেন্টে সাবেক এমপি লালু সোনাতলার বালুয়া ইউনিয়নের ভিডাব্লিউবি কর্মসূচীর চাল বিতরণ বগুড়া-১ আসনে নতুন তালিকায় খসড়া ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১২৫টি সোনাতলায় বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে জামায়াত নেতা শাহাবুদ্দীনের মতবিনিময় সোনাতলায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে শান্তি ফাউন্ডেশনের শিক্ষা বৃত্তি প্রদান সোনাতলায় রাস্তার মাঝখান থেকে অপসারণ করা হলো বৈদ্যুতিক খুঁটি সোনাতলায় পুলিশের হাতে হেরোইনসহ কিশোর আটক বগুড়ায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে দুলাভাই কর্তৃক ছষ্ঠ শ্রেণীর স্কুলছাত্রী ধর্ষিত সারিয়াকান্দিতে আলোচিত শাহিনূর হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার

তালপাতার হাতপাখায় তাদের জীবনগাঁথা

  • সোমবার, ৪ মার্চ, ২০২৪
  • ১৯৮

মুনসুর রহমান তানসেন, কাহালু (বগুড়া) থেকেঃ গ্রামীণ জনপদের একটি অতি পরিচিত নাম ঐতিহ্যবাহী তালপাতা দিয়ে তৈরী হাতপাখা। এই তালপাতার পাখায় আবার-বৃদ্ধ-বণিতার নিখুঁত হাতের নকশায় ফুটে উঠে গ্রামবাংলার লোকগাঁথা জ্যামিতিক নকশা। প্রচলিত প্রবাদ বাক্য ”শীতের কাঁথা, বর্ষার ছাতা আর গরমে পাখা” এ ছিল বাঙালির চিরকালের সম্বল।
পাখা তৈরী ও ব্যবহারের ইতিহাস বহু প্রাচীন। তালপাতার পাখা ব্যবহারের ইতিহাস বহু প্রাচীন হলেও এখনো গ্রাম বাংলার মানুষ গরমে শীতল বাতাস পাওয়ার অবলম্বন বলতে বোঝে তালপাতার তৈরী হাতপাখা। চৈত্রের প্রখর রৌদ্র আর জৈষ্ঠের আম-কাঠাল পাকা গরম অথবা ভাদ্রের কাঠফাটা তাপদাহ আবহমান বাংলার চির পরিচিত। পীড়াদায়ক গরম থেকে স্বস্তির হাতিয়ার এই তালপাতার হাতপাখা।
যান্ত্রিক সভ্যতায় বাঙালির লোকগাঁথা অনেক শিল্পের মতো দেশের বিভিন্ন স্থানে বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম প্রতিক তালপাতার তৈরী হাতপাখা বিলুপ্তির পথে। এখন সবখানেই ব্যবহার হচ্ছে বৈদ্যুতিক পাখা। ধনীদের ঘরে চলে এসি। বিদ্যুতবিহীন অবস্থায় কোথাও কোথাও চোখে পড়ে প্লাষ্টিকের হাতপাখা। তারপরেও তালপাতার পাখায় যাদের জীবনগাঁথা তারা এখনো টিকে রেখেছেন বাপ-দাদার এই আদিপেশা তালপাতার পাখা তৈরীর কাজ।
বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের আড়োলা, আতালপাড়া ও যোগীরভবন এলাকার প্রায় ৩০০ পরিবার এখনো তালপাতার পাখা তৈরী করেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। গরম পরার আগে থেকেই তারা শুরু করেন পাখা তৈরীর কাজ। পাখা তৈরীর জন্য তারা কার্তিক মাস থেকে সংগ্রহ করতে থাকেন তালপাতা, বাঁশ, পাাখা তৈরীর জিনিসপত্র। কার্তিক, অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাস ধরে তারা পাখা তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মজুদ করে মাঘ মাস থেকে পাখা তৈরীর কাজে হাত দেন। তাদের এই কাজ চলে ভাদ্র মাস পর্যন্ত।
আড়োলা উত্তরপাড়ার বৃদ্ধ মজিবরের বয়স এখন ৮৪ বছর। বয়েসের ভারে নুয়ে পড়লেও এখনো তিনি স্ত্রী মনোয়ারা (৭৮) কে নিয়ে পাখা তৈরী করছেন। পাইকড় ইউনিয়নের এই পাখার গ্রামগুলো ঘুরে লক্ষ্য করা গেছে পাখা তৈরীর জন্য একেক জন একেক কাজ করছেন। কেউ তালপাতা কেটে নিচ্ছেন, কেউ চাক বাঁধছেন। কেউ রং তুলি দিয়ে পাখায় নকশা করছেন আবার কেউ পাখার ডাটি লাগাচ্ছেন। এভাবেই প্রতিটি ঘরে ঘরে ও বাড়ির উঠানে চলছে পাখা তৈরীর কাজ।
সেখানকার পাখাশিল্পী নুরজাহান জানালেন তারা প্রথমে তালপাতা কেটে নিয়ে তা রোদে শুকিয়ে নেন। তারপর পাখা তৈরীর ডিজাইনে আবার তালপাতা কেটে নিয়ে বাঁশের পাতি দিয়ে বেঁধে হলুদ রং এ ভিজিয়ে রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয়। এভাবে শুকিয়ে নেওয়ার পর পাখার চতুর ধার সুতো দিয়ে বেঁধে বিভিন্ন রং দিয়ে তুলির আঁচড়ে নকশা করা হয়। তারমতে যোগীরভবন, আড়োলা ও আতালপাড়ায় প্রকারভেদে চার ধরণের পাখা তৈরী করা হয়। তাদের তৈরী পাখার মধ্যে রয়েছে ডাটি পাখা, হরতন পাখা, ঘুরকি পাখা ও পকেট পাখা। এই পাখাগুলো প্রকারভেদে পাইকারী দরে প্রতি পিচ ১৫ টাকা থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়।
৭৫ বছরের বৃদ্ধ ধলু পাইকার জানান, তিনি চাক তোলেন ও পাখার ডাট তৈরী করেন। ১০০ চাকের মজুরী ১০০ টাকা ও ১০০ পাখার ডাট তৈরীর মজুরী ৫৫ টাকা পান। ধলু মিয়ার স্ত্রী ১০০ পাখায় নকশা করে ১০০ টাকা পান। ধলু পাইকারের মতে তাদের গ্রামের অধিকাংশ মানুষই পাখা তৈরী করে সংসার চালান। পাখাশিল্পী আঃ রাজ্জাক জানান, তিনি নগরবাড়ির এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১০ হাজার পাখা তৈরীর অর্ডার পেয়েছেন, আরও অনেক ব্যবসায়ী অর্ডার দিতে চাচ্ছেন। যারফলে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে নিজেই পাখা তৈরী করছেন এবং স্থানীয় তৈরীকারকদের কাছ থেকে পাখা সংগ্রহ করছেন।
টুকু মিয়া ও তার স্ত্রী ফাইমা প্রায় ১ মাস আগে পাখা তৈরীর আগাম অর্ডার নেন। বর্তমানে ঘুরকি পাখার বাজার ১৫/১৬ টাকা হলেও আগাম অর্ডারের টাকা নেওয়ায় তাকে সেই পাখা ১৩ টাকা পিচ দরে দিতে হচ্ছে। এই দম্পতি জানান, সরকারিভাবে এই শিল্পের জন্য পৃষ্টপোষকতা করলে এখানে তৈরী পাখা সারাদেশে সরবরাহ করা সম্ভব। পাখার গ্রামের গৃহবধু শ্যামলী, জাকিয়াসহ অনেকে জানালেন আমাদের এখানকার কয়েকটি পাড়ার মানুষই পাখা তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারা এখানে বধু হয়ে আসার পর থেকেই শুনছেন এই গ্রামের সকল মানুষের জীবনের সাথে গাঁথা রয়েছে তালপাতার পাখা তৈরীর কাজ।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মিটু চৌধুরী জানান, এই হস্তশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে পাখা তৈরীকারকদের আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নিউজে সর্বশেষ

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট