1. sonatalasangbad@gmail.com : সোনাতলা সংবাদ :
বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

বগুড়ায় আড়াই মাসে শিশুসহ ২৪ জন নারী ধর্ষিত, বেশি ধর্ষিত নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীরা

  • বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫
  • ১০৯

সোনাতলা সংবাদ ডেস্কঃ দেশজুড়ে ধর্ষণের প্রতিবাদে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে। কিন্তু এর মধ্যেও বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। চলতি বছর ২০২৫ সালের জানুয়ারি ও ফ্রেব্রুয়ারি এই দুই মাসে বগুড়ায় শিশুসহ ২০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। চলতি মার্চ মাসেও ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে।

১ মার্চ থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত ১৭ দিনে দুই শিশুসহ তিনটি ধর্ষণ ও চার বছর বয়সী আরও এক শিশু বলাৎকারের শিকার হয়েছে। এসব ধর্ষণের ঘটনায ২৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পার পাচ্ছে না ধর্ষকরাও, তারাও গ্রেফতার হচ্ছে। তারপরও ধর্ষণের ঘটনা থামছেই না। বিশ্লেষকরা বলেন, ধর্ষণের শিকার বেশিরভাগই শিশু ও নারী নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের। যারা উচ্চবিত্ত, সমাজের ওপর তলার মানুষ, তারা শিকার হচ্ছেন কম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া জেলায় জানুয়ারি মাসে শিশুসহ ১১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এছাড়া নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৩৭টি। এরমধ্যে জানুয়ারিতে বগুড়া সদরে ছয়জন, শাজাহানপুর, গাবতলীত ও সারিয়াকান্দিতে একজন করে এবং ধুনটে দুইজন শিশু ও নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। সেইসাথে ফেব্রুয়ারি মাসেও জেলায় শিশুসহ ৯ জন নারী ধর্ষিতা হয়েছেন। এরমধ্যে বগুড়া সদরে দুজন, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, দুপচাঁচিয়ায়, নন্দীগ্রাম, কাহালু, শেরপুর ও ধুনটে একজন করে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাছাড়া এ মাসে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৩৩টি।

চলতি মার্চ মাসে বগুড়ার কাহালুতে সবচেয়ে আলোচিত দুই শিশু ধর্ষণের ঘটে। গত ১২ মার্চ বুধবার উপজেলার পাইকড় এলাকায় আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা ৫ ও ৭ বছর বয়সী শিশু দু’টি বাড়ির সামনে খেলছিল। এ সময় খাবার দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে শিশু দুটিকে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে নুরুল ইসলাম নুরু নামে এক ধর্ষক।

এরপর ১৩ মার্চ বৃহষ্পতিবার ধর্ষণের শিকার দুই শিশুর একজন জ্বরে আক্রান্ত ও আরেকজনের রক্তক্ষরণ শুরু হলে পরিবার বিষয়টি টের পেয়ে তাদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। পরে এঘটনায় পুলিশ ধর্ষক নুরুল ইসলাম নুরুকে গ্রেফতার করে।

গত ১১ মার্চ বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের চাঙ্গুইর গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় এক প্রতিবন্ধি নারীকে ধর্ষণ করে তার খালু হাসান আলী। পরে এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ ধর্ষক খালু হাসান আলীকে গ্রেফতার করে। এছাড়া গত ১৭ মার্চ শহরের ফুলবাড়ি আমতলা মোড়ে চার বছরের এক শিশুকে বাড়িতে ডেকে এনে বলাৎকার করে অপর এক কিশোর। পুলিশ ওই কিশোরকে গ্রেফতার করেছে। এর আগে শহরের ফুলবাড়ি মগলেসপুরে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে বাবা ও ছেলে। পরে পুলিশ এ ঘটনায় ছেলে গোপাল চন্দ্র দাসকে গ্রেফতার করে।

দেশে এত ধর্ষণ হচ্ছে কেন? তা রোধের উপায় কী? এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যপক আবু সায়েম বলেন, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ও পিতৃতান্ত্রিক সমাজ নারীকে দুর্বল ও অধীনস্থ হিসেবে দেখার মানসিকতা অনেক ক্ষেত্রে ধর্ষণের পেছনের মূল কারণ। তিনি বলেন, পর্নোগ্রাফির সহজ লভ্যতা ও ইন্টারনেটে অসংখ্য অবৈধ ও বিকৃত পর্নোগ্রাফি, যা অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মানসিকতাকে বিকৃত করছে।

এছাড়া দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় যৌন শিক্ষা না থাকায় অনেকে সম্পর্কের সম্মান বা যৌন অপরাধ সম্পর্কে সচেতন নন। তিনি বলেন, সামাজিক অবক্ষয় ও নৈতিকতার অভাব সমাজে ধীরে ধীরে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা যাচ্ছে। পরিবারের মধ্যে সঠিক নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের চর্চা না থাকায় অনেক তরুণ সহজেই সহিংস ও অপরাধমূলক পথে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ধর্ষণবিরোধী কঠোর আইন রয়েছে, তবে আইনের কার্যকর প্রয়োগ অনেক ক্ষেত্রেই দুর্বল।

অপরাধীদের দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা না থাকায় তারা আরও বেশি সাহস পায়। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের আশ্রয় অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ধর্ষণের ঘটনা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ধামাচাপা পড়ে যায়। ধর্ষণ প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও নারীর প্রতি প্রচলিত পুরষতান্ত্রিক দৃষ্ঠিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে এবং ধর্ষিতাকে নয়, অপরাধীকে দোষী সাব্যস্ত করার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। সেইসাথে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার ভূমিকার পরিবারে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে এবং ধর্মীয় অনুশাসন সঠিকভাবে মানতে হবে।

এছাড়া নারী ও শিশুদের সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি,নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। তিনি বলেন, দ্রুত ও কঠোর বিচার ধর্ষণের বিচার ও শাস্তি দ্রুত কার্যকর করলে অপরাধীরা ভয় পাবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ সচেতন হলে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ হলে ধর্ষণের সংখ্যা কমতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলেন, ধর্ষণের শিকার বেশিরভাগই শিশু-নারী নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের। যারা উচ্চবিত্ত, সমাজের ওপর তলার মানুষ, তারা শিকার হচ্ছেন কম। যারা নিম্নবিত্ত পরিবারের তারা ধর্ষণের পর ভয়ে চুপ থাকে। তাদের ধারণা, আইন আদালত করলে তাদের ভাগ্যে উল্টো বিপত্তি ঘটবে। এ মানসিকতা এবং অন্যায় করে অপরাধী পার পেয়ে যাওয়ার কারণেই দেশে ধর্ষণ বেড়ে গেছে।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া ও ট্রাফিক) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন বন্ধে আগে মানসিকতা বদলাতে হবে। ধর্ষণ কমাতে হলে মানুষের মধ্যে মানবিক গুণাবলী জাগ্রত করতে হবে। ধর্ষণ রোধে সচেতন হতে হবে। তিনি আরও বলেন, বগুড়ায় গত আড়াই মাসে যে কয়টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এর মধ্যে যারা জড়িত আছে তাদের প্রায় সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বগুড়ায় ধর্ষণ করে কোন অপরাধী পার পাচ্ছে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। সূত্র- দৈনিক করতোয়া।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নিউজে সর্বশেষ

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট