বগুড়া প্রতিনিধি: দিনভর কোটা বিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে বগুড়ায় দফায় দফায় সংঘর্ষে শহর রণক্ষেত্রে পরিনত হয়েছিল। এসময় ছাত্রলীগের হামলায় স্কুলছাত্রসহ কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় শত শত শিক্ষার্থী আহতহ হওয়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে সাধারন ছাত্ররা সরকারি আজিজুল হক কলেজে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে ছাত্রলীগ ককটেল হামলা চালায়। এতে ৪জন শিক্ষার্থী আহত হন। আহতরা হলো সরকারি আজিজুল হক কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র মিলন (২১), ফিন্যান্সের ছাত্র মামুন (২১) ও তাফসির রহমান (২১) এবং পদার্থ বিজ্ঞান ৩য় বর্ষের ছাত্র সুমন রানা। আহতদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সকাল ১১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সরকারি আজিজুল হক কলেজের নিকটবর্তী কামারগাড়ী রেল গেইট থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে সাধারন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি অধ্যক্ষের বাস ভবনের সামনে দিয়ে কলেজের মূল ক্যাম্প অতিক্রম করে রেল গেইটের সামনে সাতমাথা-তিনমাথা সড়ক অবরোধ করে। সেখানে আনুমানিক ২০-২৫ মিনিট সড়ক অবরোধ করে রাখার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মিরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে উত্তেজনা দেখা দেয়।
বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে হঠাৎ করেই ক্যাম্পাসে বিকট শব্দে ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রাস্তা থেকে সরে যায়। সাধারন শিক্ষার্থীদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মিরা ক্যাম্পাসের দখল নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। এই দাবীতে সোমবার রাত থেকে আন্দোলন করছে বগুড়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে এবং কোটা প্রথা বাতিলের দাবীতে সকাল থেকে বিক্ষোভ করছে বগুড়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তারা মহাসড়কে বসে পড়ে। এসময় উভয় পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর মহাসড়ক ছেড়ে শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করে। এর আগে গতরাতে মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পডাসে শত শত শিক্ষার্থী কোটা প্রথা বাতিলের দাবীতে বিক্ষোভ করে।
বগুড়া পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এই ঘটনার পর থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বনানী-সাতমাথা রোড কয়েক ঘন্টা অবরোধ করে রাখে।
আন্দোলনকারীরা জানান, কোটা প্রথা সংষ্কারের দাবীতে চলমান আন্দোলনে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা ইউনিফর্ম পরে মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামে। মিছিলটি বনানীর দিকে যাওয়ার সময় শাহসুলতান কলেজ থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মিরা মিছিলে হামলা চালায়। এসময় ছাত্রলীগ কর্মিদের লাঠির আগাতে একজন শিক্ষার্থী আহত হয়। তাকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এঘটনার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পলিটেকনিকের সামনে ফিরে এসে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে।
একপর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মিদের সাথে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। দুই পক্ষই ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। পলিটেকনেকের ছাত্ররা লাঠি হাতে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। একপর্যায়ে সাংবাদিকের একটি মোটর সাইকেল ভাংচুরের ঘটনাও ঘটে। বনানী-সাতমাথা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বগুড়া জিলাস্কুলের শিক্ষার্থীরা দুপুরে মিছিল বের করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মিরা হামলা চালায়। তারা পরপর কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটালে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ককটেলের আঘাতে জিলাস্কুলের একাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে তারা দাবি করেছে। এখবর ছড়িয়ে পড়লে জিলাস্কুলের শত শত সাবেক ও বর্তমান ছাত্ররা সাতমাথায় এসে বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় আওয়ামীলীগ অফিসের সামনে থেকে ছাত্রদের লক্ষ্য করে ৩/৪টি ককটেল নিক্ষেপ করে ছাত্রলীগ। পুলিশের সামনেই একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটলেও পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করে। একপর্যায়ে বিকেল আনুমানিক ৩টার পর হাজার হাজার শিক্ষার্থী শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা দখলে নেয়। এসময় আওয়ামীলীগ অফিসের সামনে খেকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করলেও সাধারন শিক্ষার্থীরা দমেনি। বরং চারিদিক থেকে ছাত্রলীগকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবরুদ্ধ করে ফেলে। কিছু সময় উভয় পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপের পর শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সাতমাথায় অবস্থিত মুজিব মঞ্চ দখল করে বিজয়োলাস করতে থাকে। এসময় আওয়ামীলীগ অফিসের আশে পাশে ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে আওয়ামীলীগ অফিসের সামনে অবস্থিত পুলিশের অস্থায়ী বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। দীর্ঘ সময় আগুন দাউ দাউ করে জ¦ললেও নেভানোর জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। ঘন্টার পর ঘন্টা শহরের জিরো পয়েন্ট অবরুদ্ধ করে রেখেছে শিক্ষার্থীরা। পুলিশ শুরু থেকেই নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
বিকেল ৫টার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিগ্ধ আক্তারের নেতৃত্বে ডিবির একটি টীম আন্দোলনকারীদের বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা পুলিশকে পিছু হটতে বাধ্য করে। সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হাজার হাজার শিক্ষার্থীর দখলে ছিল সাতমাথা। তারা সাধারন ছাত্রদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে কোটাবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন জানান।
Leave a Reply