সোনাতলা সংবাদ ডেস্কঃ নিজের মাকে হত্যা করে ডিপ ফ্রিজে রেখে ডাকাতির নাটক সাজিয়েছিল পুত্র। এঘটনায় ডাকাতি ও হত্যার বিষয়টি ব্যপক চাঞ্চল্যর সৃষ্টি করে। তবে বগুড়ার র্যাব-১২ এর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে আসল রহস্য।
১২ নভেম্বর দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, বগুড়ার ধুপচাচিয়া উপজেলার জয়পুুরপাড়া এলাকার আজিজুর রহমানের ১৯ বছর বয়সী পুত্র সাদ বিন আজিজুর রহমান তার মাকে হত্যা করে ফ্রিজে রাখে। পরে নিজে বাঁচার জন্য একটি ডাকাতির নাটক সাজায়। সেই অনুযায়ী ঘরে রাখা কুড়াল দিয়ে তার বাবা-মায়ের বেড রুমের আলমীরা কুপিয়ে মেইন গেটে তালা লাগিয়ে বাহিরে চলে যায়। এঘটনায় স্থানীয়রাসহ সারাদেশে ব্যপক চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে তথ্য-সূত্রের ভিত্তিতে নিহত উম্মে সালমা খাতুনের নিজের পুত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে নৃসংস হত্যার ঘটনা স্বীকার করে।
র্যাব আরো জানায়, গ্রেফতার পরবর্তী তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভিকটিম উম্মে সালমা খাতুন(৫০) এর সাথে ঘাতক পুত্র মোঃ সাদ বিন আজিজুর রহমানের হাত খরচের টাকা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন যাবৎ ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিলো এবং বাসা থেকে প্রায় প্রতিদিনই ৫০০-১০০০ টাকা হারিয়ে যেতো। ঘটনার দিন সকালে তার মা ভিকটিম উম্মে সালমা খাতুনের সাথে হাত খরচের টাকা নিয়ে কথার কাটাকাটি ও বাকবিতন্ডা হয়। পরে আসামী রাগ করে সকালের নাস্তা না খেয়ে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুপচাঁচিয়া দারুসসুন্নাহ কামিল মাদ্রাসায় ক্লাস করতে চলে যায়। (অত্র মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল ঘাতকের বাবা আজিজুর রহমান) বেলা ১১ টায় মাদ্রসার টিফিন বিরতি হরে মাদ্রাসার আশপাশ এবং তার বাসার কাছাকাছি এলাকায় ঘুরে বেড়ায় এবং অনুমান সারে ১২টার দিকে ঘাতক পুত্র বাসায় প্রবেশ করে।
এসময় সে দেখতে পান যে, তার মা উম্মে সালমা খাতুন বাসায় বসে একাই বটি দিয়ে মিষ্টি কুমড়ার তরকারি কাটাছিল। এসময আসামী পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তার মায়ের পিছন দিক থেকে হত্যার উদ্দেশ্যে নাক-মুখ চেপে ধরে। এক পর্যায়ে তার মা বাঁচার জন্য চেষ্টা করতে থাকলে মায়ের হাতের তর্জনী আঙ্গুলের নীচে তরকারি কাটার বটি লেগে হালকা কেটে যায়। পরে আসামী তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে নাক-মুখ দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে শ^াসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করে।
মৃত্যু পরবর্তীতে ঘাতক একাই তার মা উম্মে সালমা খাতুন এর দুই হাত ওড়না দিয়ে বেঁধে বাসায় থাকা ডিপ ফ্রিজের ভেতরে রেখে ফ্রিজের ঢাকনা লাগিয়ে দেয়। ঘটনাটি ডাকাতির ঘটনা হিসেবে সাজানোর জন্য বাসায় থাকা কুড়াল দিয়ে তার বাবা এবং মায়ের বেডরুমে থাকা আলমারিতে কয়েকটি কোপ মেরে কুড়াল সেখানে রেখেই বাসার মেইন গেইটে তালা দিয়ে বের হয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরে আসামী নিজেই আবার মেইন গেটের তালা খুলে বাসায় প্রবেশ করে তার বাবা আজিজুর রহমানকে ফোন করে জানায় যে, মাকে বাসায় পাওয়া যাচ্ছে না। ফোনে কথা বলার ৩-৪ মিনিটের মধ্যেই আজিজুর রহমান বাসায় চলে আসে এবং বাসায় কিছুক্ষণ খোঁজাখুজি করে না পেয়ে উম্মে সালমার ভাইদের ফোন করে।
ফোন পেয়ে ছোট ভাইসহ প্রতিবেশী আরও অনেকেই বাসায় আসলে আসামী ঘাতক সাদ বিন আজিজুর রহমান সু-কৌশলে তার বাবা এবং দুই মামাকে দিয়ে ছাদে এবং বাসার ভিতরে সমস্ত জায়গায় খোঁজাখুজি করার অভিনয় শুরু করে। এক পর্যায়ে ঘাতক নিজেই ডিপ ফ্রিজের ঢাকনা খুলে “মা” উম্মে সালমা খাতুন(৫০) এর মৃত দেহ উদ্ধার করে এবং ডাকাত দল এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
সোনাতলা সংবাদে লিখতে পারেন আপনিও। যে কোনও তথ্য ও ভিডিও দিন নিচের WhatsApp নাম্বারে। প্রয়োজনে আপনার নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হবে।
মোবাইল: ০১৭৭৪৬৫০৬৭১
E-mail: sonatalasangbad@gmail.com