গোলাম রব্বানী শিপন, মহাস্থান বগুড়াঃ ফলের মধুমাস জ্যৈষ্ঠ। জৈষ্ঠ্যমাস শেষ হলেও চারদিকে মৌসুমী ফলে এখনো বাজার ছেয়ে আছে । আর এসব মিষ্টি ফলের গন্ধের প্রতিযোগিতায় সব ফলকে বিলুপ্তিতায় ফেলে এখন এগিয়ে জাতীয় ফল কাঁঠাল। এমন চিত্রই মিললো জমে উঠা বগুড়ার মহাস্থানের কাঁঠাল হাট। দেশের কাঁঠাল উৎপাদনকারী অনেক অঞ্চলের নাম শোনা গেলেও এর মধ্যে মহাস্থান অন্যতম। এখানে আশেপাশের ৮/১০ গ্রামের গৃহস্থ ও কাঁঠাল ব্যবসায়ীদের আমদানি করা কাঁঠালে জমজমাট থাকে। তবে এবার কাঁঠালের আমদানি অনেক কম হওয়ায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। আগে মহাস্থানের আমদানিকৃত কাঁঠাল প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ট্রাক দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করা হতো। সে হিসেবে এবার কাঁঠালের আমদানি অর্ধেকে নেমেছে। এবার প্রতিদিন ৪/৫ ট্রাক কাঁঠাল হাটে আমদানি হচ্ছে।
মঙ্গলবার বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহাস্থান হাটের আগের দিনেই পাইকাররা ভিড় জমায় এখানকার কাঁঠাল হাটে। সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এ হাটে কাঁঠাল কেনাবেচা হয়। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার পাকুড়তলা গ্রামের বেলাল মিয়া ৩১ টি কাঁঠাল নিয়ে অটোভ্যান যোগে মহাস্থান হাটে বিক্রি করতে এসেছে। তার ৩১টি কাঁঠালের দাম হাকানো হয়েছে ৫হাজার টাকা। গাবতলী উপজেলার সোনারায় গ্রামের মফিজুর রহমান তার গাছের বাছাইকৃত ১৯টি কাঁঠাল ৩৯০০ টাকা বিক্রি করলেন। মহাস্থান হাটের স্থানীয় পাইকার রেজাউল করিম রেজা বলেন, এবার কাঁঠালের আমদানি কম কিন্তু দাম বেশি। হাটের সবচেয়ে বড় ৫টি কাঁঠাল তিনি ১৭০০ টাকা দরে কিনলেন।
ভ্যানবোঝাই করে কাঁঠাল নিয়ে আসা আরেক ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন জানান, প্রতিদিন তারা গ্রাম-গঞ্জ থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করে মহাস্থান হাটে বিক্রি করে থাকেন। প্রতি পিস কাঁঠাল সাইজ অনুসারে ৮০টাকা থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। মহাস্থান হাটে কাঁঠাল যাচ্ছে কুমিল্লা, সিলেট, চট্রগ্রাম লাকসাম, নোয়াখালী ও সাতক্ষীরা। এদের মধ্যে সিলেট থেকে আসা পাইকার আল আমিন জানান, এই এলাকাতে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠালের চাষ হয়। তাই মৌসুম জুড়ে অনেক কাঁঠাল পাওয়া যায় বলে সিলেট থেকে এসে অথবা সহকারীদের মাধ্যমে ট্রাক ভর্তি করে কাঁঠাল কিনে নিয়ে যান। বগুড়া চেম্বার অব কমার্মে সদস্য ও বিশিষ্ট আড়ৎ ব্যবসায়ী মাহিম ও মুক্তি ফল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী রহেদুল ইসলাম জানান, দেশের দক্ষিণ অঞ্চল থেকে বেপারীরা মহাস্থানহাটে কাঁঠাল কিনতে আসেন। এরা আগের দিনে বিভিন্ন আড়ৎ, আবাসিক হোটেলে থাকেন। তারা আমাদের মাধ্যমে কমিশনে কাঁঠাল কিনে ট্রাক লোড দিয়ে নিজ গন্তব্যে যান। মহাস্থান হাট থেকে কিনে তাদের এলাকায় প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়। মহাস্থান কাঁঠালের আমদানির কারনে আড়ৎ ব্যবসায়ী, লেবার শ্রমিক, কাঁঠাল পরিবহন অটোভ্যান ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ব্যবসার সুফল ঘটেছে।
Leave a Reply