মুনসুর রহমান তানসেন, কাহালু থেকেঃ বগুড়া-৪ আসনের মধ্যে পড়েছে দুটি উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন, ৩ টি পৌরসভা। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ২৩৯ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৭৩ হাজার ১১০ জন। এখানে পুরুষ ভোটারের চেয়ে মহিলা ভোটার ১ হাজার ৮৭১ জন বেশী।
এই আসনে মোট কেন্দ্র সংখ্যা ১১৪ টি ও ভোটকক্ষ সংখ্যা ৭৭২ টি। এই আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী পাঁচজন। এদের মধ্যে ১৪ দলীয় জোটের শরিক প্রার্থী জাসদের এ, কে, এম রেজাউল করিম তানসেন ( নৌকা), সতন্ত্র প্রার্থী ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লা (ঈগল), বাংলাদেশ কংগ্রেস প্রার্থী মোঃ আশরাফুল আলম (ডাব), সতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মোশফিকুর রহমান (ট্রাক) ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাহীন মোস্তফা কামাল (লাঙল) প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
১৯৮৬ সাল থেকে এই আসনের ভোটের হিসাব-নিকাশে দেখা গেছে ১৯৮৬ সাালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মামদুদুর রহমানকে বিজয়ী ঘোষনা করে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দি দেখানো হয় আওয়ামীলীগের শহিদুল আলম দুদুকে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির আজিজুল হক মোল্লা ৪৩ হাজার ২৪৭ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী আব্দুর রহমান ফকির ৩৪ হাজার ৩৭২ ভোট ও আওয়ামীলীগের শহিদুল আলম দুদু ৩১ হাজার ১৯২ ভোট পান। আজিজুল হক মোল্লার মৃত্যুর পর ১৯৯৪ সালের উপনির্বাচনে তাঁর পুত্র ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লা এখানে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি বিতর্কিত নিবাচনে বিএনপির ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লা এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের জুন মাসে সব দলের অংশগ্রহনে বিএনপির ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লা ৬৪ হাজার ১৪১ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের শহিদুল আলম দুদু ৩৮ হাজার ৩৯৫ ভোট পান এবং জামায়াতে ইসলামীর নাজির আহম্মেদ ৩২ হাজার ৬২৫ ভোট পান।
২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে বিএনপির ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লা ১ লাখ ১৪ হাজার ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের শহিদুল আলম দুদু ৭২ হাজার ৪৬৪ ভোট পান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির জেড, আই, এম মোস্তফা আলী মুকুল ১ লাখ ৩১ হাজার ৪১৪ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দি আওয়ামীলীগের শরিক জাসদের এ, কে, এম রেজাউল করিম তানসেন ৭৫ হাজার ৯৯১ ভোট পান। ১৪ দলীয় শরিক জাসদকে আসন ছেড়ে দেওয়ায় এই আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ছিলনা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাসদের এ, কে, এম রেজাউল করিম তানসেন ২২ হাজার ২০৩ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দি মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির নুরুল আমীন বাচ্চু ১৩ হাজার ৪৮৯ ভোট পান। মহাজোটকে আসন ছেড়ে দেওয়ায় এখানে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী ছিলনা।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মোঃ মোশারফ হোসেন ১ লাখ ২৬ হাজার ৭২২ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রার্থী ১৪ দলীয় শরিক জাসদের এ, কে, এম রেজাউল করিম তানসেন ৮৪ হাজার ৬৭৯ ভোট পান। জাসদকে আসন ছেড়ে দেওয়ায় এই নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী ছিলনা। গত বছরের প্রথম দিকে বিএনপির সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন পদত্যাগ করলে এই আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উপনির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাসদের এ, কে, এম রেজাউল করিম তানসেন ২০ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দি মোঃ আশরাফুল আলম ১৯ হাজার ৫৭১ ভোট পান। এই উপনির্বাচনেও শরিক দলকে আসন ছেড়ে দেওয়ায় আওয়ামীলীগের কোন প্রার্থী ছিলনা।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে এই আসনটি ছিল বগুড়া-৮ আসন। তৎকালীন সময়ে এই বগুড়া-৮ আসনে আওয়ামীলীগের এ কে মজিবুর রহমান এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে বগুড়া জেলার থেকে জয়পুরহাট আরেক জেলা করার পর এই আসন বগুড়া-৪ করা হয়। ১৯৭৩ সালের পর পরবর্তী কোন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এমপি নির্বাচিত হতে পারেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে সবগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট ও ১৪ রদলীয় জোটের শরিকদের আসন ছেড়ে দেওয়ায় আওয়ামীলীগের কোন প্রার্থী এই আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে এই আসনে আলহাজ্ব মোঃ হেলাল উদ্দিন কবিরাজকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষনা করা হলেও আবারও ১৪ দলীয় জোটের শরিককে আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় এবারও এখানে আওয়ামীলীগের কোন প্রার্থী নেই। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ রাস্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলেও নিজের দল এমপি না থাকায় দলীয় নেতাকর্মীরা বরাবরই বঞ্চিত হয়েছেন। এবার কাহালু উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র আলহাজ্ব মোঃ হেলাল উদ্দিন কবিরাজকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার পর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছিল অনেকটা উৎসাহ উদ্দিপনা। অবশেষে শরিক দলকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ার পর মুহুর্তের মধ্যেই আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মুখ মলিন হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কেউ এই আসনে মনোনয়ন না পাওয়ায় নেতাকর্মীরা অনেকটা হতাশার মধ্যে পড়েছেন।
দ্বাদশ নির্বাচনের জন্য প্রতিক বরাদ্দ হওয়ার পর থেকে রেল স্টেশন, হোটেল, রেস্তোরা, চায়ের স্টলসহ বিভিন্ন স্থানে ভোটারদের মধ্যে চলছে প্রার্থীদের নিয়ে চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ। বিএনপি এই ভোটে অংগ্রহন না করলেও কোথাও থেমে নেই ভোটের আলোচনা। এখন এই আসনের সবখানেই চলছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আলোচনা। ভোটারা বলছেন এবার তারা ভালো প্রার্থীকেই নির্বাচিত করতে চান।
সোনাতলা সংবাদে লিখতে পারেন আপনিও। যে কোনও তথ্য ও ভিডিও দিন নিচের WhatsApp নাম্বারে। প্রয়োজনে আপনার নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হবে।
মোবাইল: ০১৭৭৪৬৫০৬৭১
E-mail: sonatalasangbad@gmail.com