বগুড়া প্রতিনিধিঃ হত্যা মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী ও বঙ্গবন্ধুকে কটুক্তিকারীর নেতৃত্বে বগুড়ার শেরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষনার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া নতুন কমিটির অনেককে নিয়ে নানা অভিযোগও রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রাতে শেরপুর উপজেলা শহরের স্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ কর্মী সভা ডেকে নেতাকর্মীদের কোন মতামত না নিয়ে শেরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের ১৩ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা ও সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম জয়। কমিটি ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠে। এতে দলের ত্যাগী ও বঞ্চিত নেতাকর্মী ও তাদের সমর্থকরা চরম ক্ষুদ্ধ। ঘোষিত কমিটিকে অবৈধ ও পকেট কমিটি আখ্যায়িত করে ছাত্রলীগকে রক্ষায় অবিলম্বে তা বাতিলের দাবী জানিয়েছেন ত্যাগী নেতাকর্মীর সূত্র জানায়, বিগত তিন-চার মাস আগে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগ। এরআগে আ.লীগ নেতা অভি হত্যা মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুর রহমান শুভকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। এরপর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে। দলীয় কর্মকা- গতিশীল করার লক্ষ্যে তড়িঘড়ি করে গত ২৩ মার্চ বিশেষ কর্মীসভা ডাকা হয়। জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান আতিকের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনুসভায় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদে গালিব সরকার ও সাধারণ সম্পাদক পদে হুমায়ুন কবির ড্যানির নাম ঘোষণা দেওয়া হয়। এছাড়া সহ-সভাপতি পদে রবিউল হাসান রুবেল, শাহরিয়ার মাহমুদ সম্রাট, রাফসান আল হাসান, যুগ্ম সম্পাদক পদে আনোয়ার পারভেজ, রাফিউজ্জামান সজল, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নাজমুল হক, নূর সাকাত জিম, মাহতিম সাকিব, মেজবাহ আল আশরাক, প্রকাশনা সম্পাদক নায়মুল হাসান ও ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে ফারদিন আহম্মেদের নাম ঘোষণা করেন জেলা ছাত্রলীগের নেতারা। কিন্তু এই কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে স্থানীয় ছাত্রলীগের পৌর ও দশ ইউনিয়নের সভাপতি-সম্পাদকসহ নেতাকর্মীদের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। এমনকি ওই কর্মীসভায় তাদের আমন্ত্রণও জানানো হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া সভাপতি গালিব সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ফেসবুকে কটুক্তি করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত গ্রাফিক আর্টস ইনস্টিটিউটের ছাত্র থাকালীন গালিব বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন। পরে তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের হয়। এরপর গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল তাকে। এছাড়া গালিবের বাবা আব্দুল বাসেত বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ড্যানিও হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। বিগত ২০১৯ সালে জেলার শাজাহানপুর উপজেলার রাজারামপুর গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে খুন হন আলমগীর হোসেন। এই ঘটনায় নিহতের ভাই মনিরুজ্জামান বাদি হয়ে শাজাহানপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ড্যানি। এমনকি ওই মামলায় বেশকিছুদিন জেলও খেটেছেন তিনি। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এসব অভিযোগে অভিযুক্তদের নেতৃত্বে ঘোষিত ছাত্রলীগের কমিটি মানতে নারাজ নেতাকর্মীরা।
এ ব্যাপারে শেরপুর পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ আহম্মেদ সুমন বলেন , যে সভা আমাদের আহবানে হওয়ার কথা সেখানে আমি নিজেই জানি না। এই পকেট কমিটি ছাত্রলীগের জন্য লজ্জার।
উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মিলন হাসান, সুঘাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরীফসহ একাধিক ছাত্রলীগ নেতা ঘোষিত কমিটিকে ভুয়া ও অবৈধ দাবি করে বলেন, কাউকে না জানিয়ে গোপনে ওই পকেট কমিটি করা হয়েছে। তাছাড়া যারা কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন তারা ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন না। বরং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তি করেছেন। হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। এরা বিএনপি-জামাত পরিবারের সন্তান। অবিলম্বে ঘোষিত ওই কমিটি বাতিল করে ছাত্রলীগকে রক্ষার জোর দাবি জানান তারা।
উপরোক্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি গালিব সরকার ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ড্যানি। তারা বলেন, তাদের নেতৃত্বে গঠিত উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির বিরুদ্ধে নানামুখি ষড়যন্ত্র চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় ফেসবুকসহ সর্বত্র মিথ্যাচার চালানো হচ্ছে।
সোনাতলা সংবাদে লিখতে পারেন আপনিও। যে কোনও তথ্য ও ভিডিও দিন নিচের WhatsApp নাম্বারে। প্রয়োজনে আপনার নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হবে।
মোবাইল: ০১৭৭৪৬৫০৬৭১
E-mail: sonatalasangbad@gmail.com