সোনাতলা সংবাদ ডেস্কঃ বগুড়ার শেরপুরে হুমায়রা খাতুন নামের ১৪ মাস বয়সী এক কন্যা শিশুকে পুকুরে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছেন এক বাবা। আজ মঙ্গলবার ভোরে স্থানীয়রা পুকুর থেকে ওই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেন। জাকির হোসেন নামের ওই বাবা উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের উঁচুলবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বিয়ের পর প্রথম সন্তান ‘মেয়ে’ হয় জাকিরের। কিন্তু কন্যাসন্তান হওয়ায় নাখোশ ছিলেন তিনি। প্রত্যাশা ছিল, দ্বিতীয় সন্তান ‘ছেলে’ হবে। কিন্তু সে আশাও পূরণ হয়নি জাকিরের। দ্বিতীয়ও সন্তানও ‘মেয়ে’ হয়। এরপর থেকেই জাকির তার স্ত্রীর ওপর ক্ষুদ্ধ হন।
কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ায় স্ত্রী রাবেয়াকে দায়ী করে সংসারে অশান্তি শুরু করেন জাকির। এ নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হয়ে আসছিল। এর জেরেই গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আবারও ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। পরে রাতের কোনো এক সময় ঘুমন্ত মেয়েকে পুকুরে ফেলে দেন জাকির।
জাকিরের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘মধ্যরাতে ঘুম থেকে জেগে দেখি আমার মেয়ে হুমায়রা খাটের ওপর নেই। পরে পরিবারের সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে বিষয়টি জানাই। আমার বোন-দুলাভাইকে খবর দিই। স্থানীয় লোকজনকেও জানানো হয়। সবাই এসে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।’
সন্তানকে না পেয়ে একাধিকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এক পর্যায়ে আমার স্বামীকে চাপ দেন তারা। পরে মেয়েকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। ’
জাকিরের ভায়রা সাইফুল ইসলাম বলেন, জাকিরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ভোর রাতে পুকুরে নেমে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় শিশুটিকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর জাকিরকে আটক করে থানায় খবর দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খন্দকার বলেন, ‘স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) হাসানকে ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তাকে নির্দেশনা দিয়েছি।’
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) হাসান বলেন, শিশুর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঘাতক বাবা জাকিরকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এসআই আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হঠাৎ মাথা গরম হয়ে যাওয়ায় এমন কাজ করেছেন বলে স্বীকার করেছেন জাকির। তিনি বলেন, ঘটনার পর এখন নিজের ভুল বুঝতে পারছি। এজন্য আমি অনুতপ্ত।
‘সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে জাকির আরও বলেছেন, আমার মতো এ ধরনের কাজ যেন আর কেউ না করেন’, যোগ করেছেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) হাসান।
Leave a Reply