মুনসুর রহমান তানসেন, কাহালু থেকেঃ আগামী বুধবার বগুড়া-৪ কাহালু-নন্দীগ্রাম আসনের উপ-নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিভিন্ন দল ও সতন্ত্র প্রার্থী মিলে মোট নয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। যেকোন নির্বাচনের শেষ মুহুর্তে নির্বাচনী এলাকার গ্রামে গ্রামে সরগরম পড়লেও এখনে তেমটি লক্ষ্য করা যায়নি।
নির্বাচনের আর মাত্র তিনদিন বাঁকী, তারপরে প্রচার-প্রচারণায় প্রার্থীদের তেমন নেই অগ্রগতি। উপজেলা সদর, পৌর সদর, বিভিন্ন হাট-বাজার ও রাস্তার মোড়ে মোড়েই সীমাবদ্ধ প্রার্থীদের প্রচারণা। বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে ভোটারদের কাছ থেকে জানা গেছে, উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন অনেকেই, কিন্ত কেউ ভোট চাইতে আসেনি আমাদের গ্রামে।
আয়রা গ্রামের আবেদ আলীর বাড়িতে এই নির্বাচন বিষয়ে জানতে গেলে তাঁর স্ত্রী ও কন্যারা জানালেন এখন পর্যন্ত কেউ তাঁদের কাছে যাননি ভোট চাইতে। সাবানপুর, হাটুরপাড়া, ঝাঞ্জারপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ভোটারেরা জানালেন মাত্র এক বছরের এমপি হওয়ার জন্য অনেকে প্রার্থী হয়েছেন, অথচ এখন পর্যন্ত কেউ ভোট চাইতে এলোনা আমাদের গ্রামে।
এছাড়াও বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে লক্ষ্য করা গেছে বেশীরভাগ প্রার্থীরই পোস্টার নেই গ্রামে গ্রামে। অনেকে মন্তব্য করেছেন মাত্র কয়েক মাসের এমপি হওয়ার জন্য প্রার্থীরা তেমন করছেন-না টাকা-পয়সা খরচ। বিভিন্ন ভোটের সময় প্রার্থীদের নির্বাচনী ক্যাম্প অধিকাংশ গ্রামে থাকতো। সেখানে চলতো চায়ের আড্ডা ও মানুষের সরগরম। কিন্ত এই নির্বাচনে গ্রামে গ্রামে নেই নির্বাচনী ক্যাম্প। অন্যান্য নির্বাচনের মত বিভিন্ন গ্রামের কোথাও নেই তেমন চায়ের আড্ডা মানুষের। নির্বাচনী ক্যাম্প ও চায়ের আড্ডা না থাকায় বিভিন্ন গ্রামে গেলে বোঝা যাবেনা এই আসনে উপ-নির্বাচন হচ্ছে।
বিভিন্ন দল ও সতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে কমবেশী আলোচনা থাকলেও সতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরু আলমকে নিয়ে উৎসুক জনতার মধ্যে আলোচনা অনেক বেশী। তবে ভোটের হিসেব-নিকাশে কি হবে তা বলা মুশকিল। মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হিরু আলমকে নিয়ে ঝড়-তুফান সৃষ্টি হলেও ভোটের মাঠে বিষয়টা ততটা সহজ নয় বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
এদিকে প্রচার-প্রচরণায় তেমন অগ্রগতি না থাকা, গ্রামে গ্রামে ভোট না চাওয়াসহ নানা কারনে এই নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি খুবই কম হতে পারে বলে অনেকে ধারণা। উপ-নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে কোন প্রার্থীর সাথে কোন প্রার্থীর লড়াই হবে তা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা থাকলেও এখানে ভোটযুদ্ধের হিসাব মিলাতে পারছেন-না কেউ। যার যার কর্মী-সমর্থক নিজ প্রার্থীর সাফাই গাইলেও তা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই সাধারণ ভোটারের।
কাহালু-নন্দীগ্রাম আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৯ জন। এঁরমধ্যে কাহালু উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৪৩ জন ও নন্দীগ্রাম উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬২৬ জন। উপজেলা নির্বাচন অফিস সুত্র জানায়, উপ-নির্বাচনে দুই উপজেলায় মোট ১১২ টি ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহন করা হবে। এঁরমধ্যে কাহালু উপজেলায় ৬৩ টি ভোটকেন্দ্র ও নন্দীগ্রাম উপজেলায় ৪৯ টি ভোটকেন্দ্র ।
এখানে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী জাসদ নেতা এ, কে, এম রেজাউল করিম তানসেন (মশাল প্রতিক), জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাহিন মোস্তফা কামাল ফারুক (লাঙ্গল প্রতিক), জাকের পার্টির প্রার্থী ( গোলাপ ফুল প্রতিক), বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মোঃ তাজ উদ্দিন (ডাব প্রতিক), সতন্ত্র প্রার্থী মুশফিকুর রহমান কাজল (ট্রাক প্রতিক), সতন্ত্র প্রার্থী কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল (কুড়াল প্রতিক) ও আলোচিত হিরু আলম (একতারা প্রতিক), মোঃ ইলিয়াস আলী (কলার ছড়ি প্রতিক) ও গোলাম মোস্তফা (দালান প্রতিক) নিয়ে নির্বাচন করছেন।
এদিকে নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের আলোচনা-সমালোচা যা অছে সাধারণনের মানুষের মধ্যে। তবে নির্বাচনকে ঘিরে খুবই তৎপর প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গয়েন্দা সংস্থার লোকজন। সুষ্ঠ, অবাধ ও শান্তিপূণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষে তাঁরা আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। নির্বাচনী এলাকায় স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন থানা থেকে আসা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এখানে আনা হয়েছে।
Leave a Reply