গোলাম রব্বানী শিপনঃ ঢাকা থেকে বগুড়ার মহাস্থানগড়ে বেড়াতে এসে ছিল ৩ জন৷ এদের মধ্যে ১ জন পুরুষ ২ জন নারী। ২ নারী তারা সম্পর্কে খালা ও ভাগ্নি। তাদের বাড়ী রংপুর। তারা ঢাকা নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। গত বুধবার ১২ জুলাই তারা তাদের গ্রামের বাড়ী রংপুর যাওয়ার পথে তাদের গাড়ী বিকল হয়ে পড়ে। এসময় তাদের পূর্ব পরিচিত আত্মীয় রব্বানীর সাথে যোগাযোগ করেন। রব্বানী তাদের মহাস্থানগড় ঘুরে যেতে বলেন। রব্বানীর বাড়ীও রংপুর। সে দীর্ঘ দিন ধরে ঢাকা ও তার এলাকায় ভাড়ায় চালিতো অটোরিকশা চালায়। সেদিন রব্বানী বগুড়ায় অবস্থান করছিলেন। একপর্যায়ে রব্বানীর কথা মতো ২ নারী মহাস্থানগড় ভ্রমনের ইচ্ছে জাগে। কিন্তু সেই মুহূর্তটা ছিল রাত। রাতে নাবালিকা ভাগ্নি ও খালাকে কোথায় রাখবে রব্বানী এমনটা চিন্তা করেন। তখন রব্বানীর পূর্বপরিচিত বন্ধু কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের কুশলিহার পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত মোজাম সরকার এর পুত্র অটোভ্যান চালক আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ীতে অবস্থান করেন। আব্দুর রাজ্জাকের বাড়িতে সারাদিন থাকার পর বিকালে মহাস্থানগড় ঘুড়ে রংপুরের উদ্দেশ্যে তারা রওনা দিবেন। তার আগে রব্বানীর কাছে থাকা ৬২ হাজার টাকা বন্ধু রাজ্জাকের কাছে জমা রাখেন।
এটিকে কুশলিহার গ্রামের আশরাফ আলী ফকিরের ছেলে আবুল কাশেম মানিক (৩৫) এলাকাজুড়ে রটিয়ে দেয় যে রাজ্জাকের বাড়ীতে খারাপ মেয়ে এসেছে। এ সংবাদ শোনার পর রব্বানী মহাস্থানগড়ে ঘুরে তাদের নিয়ে রংপুর যাওয়ার পথে সন্ধ্যায় পাইকড় ইউনিয়নের বাগইল পুকুর ব্রিজ নামক স্থানে পৌঁছিলে ১০/১২ জনের ১টি দুর্বৃত্তের দল তাদের অটোভ্যানের গতিরোধ করে নেমে পাশের জঙ্গলে নিয়ে যায়। এসময় রব্বানী তাদের বাঁধা দিলে দুর্বৃত্তরা তাকে বেধড়ক মারপিট করে কাছে থাকা ৬২ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। একপর্যায়ে রব্বানী সেখান থেকে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে যায়। অপ্রাপ্ত (নাবালিকা) ভাগ্নি ও খালাকে ১টি তালগাছের নিচে ফেলে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ভিকটিমদের কাছে থাকা নগদ টাকা, ১জোড়া স্বর্ণের কানের দুল ও একটি বাটন মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এরপর ভিকটিম ভাগ্নি ও খালা কোনমতে প্রাণ বাঁচিয়ে তারা ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এদিকে তাদের ৩ জনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ায় তারা কেউ কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারে না। একপর্যায়ে তারা ঢাকায় গিয়ে সম্মিলিত হয়। তখন রব্বানী জানতে পারেন যে তারা গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গত মঙ্গলবার ভিকটিম সহ রব্বানী বগুড়া সদর কোর্টে এঘটনার মূলহোতা ধর্ষক ও ছিনতাইকারী কুশলিহার গ্রামের আশরাফ আলী ফকিরের পুত্র আবুল কাশেম অরফে মানিক (৩৫)সহ ঘটনায় জড়িত অজ্ঞাত আরও কয়েকজন যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলার পরপরই পুলিশ ২৪ ঘন্টায় ধর্ষণের নেপথ্যের মূল নায়ক আবুল কাশেম অরফে মানিকসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেন। অন্যান্য আসামী হলেন, বাগোইল দক্ষিণপাড়া গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক এর পুত্র মোহাম্মদ রাকিব হাসান (২৩), বাগোইল উত্তরপাড়ার নুরুল ইসলামের পুত্র মোহাম্মদ শাকিল হোসেন (২৩), একই গ্রামের আইয়ুব আলীর পুত্র আতিক হাসান প্রান্ত (২২) এবং কুশলিহার পূর্ব পাড়ার মোস্তফা ফকির ওরফে মুস্তা ফকিরের পুত্র মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান হাবিব (২৫)। গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে কাহালু থানায় ডাকাতিসহ গণধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বিজ্ঞ আদালতে উপস্থিত করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্য আসামীদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
Leave a Reply