গোলাম রব্বানী শিপন, বিশেষ প্রতিনিধিঃ বিরূপ আবহাওয়ায় ফলন ভালো না হওয়ায় এবছর ভারতের বাজারে পেঁয়াজের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। সে কারণে গত অগাস্টে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে বিধি নিষেধ আরোপ শুরু করে ভারত।
ভারতের বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টায় আগামী মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির সরকার। গত বৃহস্পতিবার জারি করা এ আদেশ শুক্রবার থেকেই কার্যকর করা হয়েছে। আর এ খবর পেয়েই এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তিরা রাতারাতি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয় ৩গুণ। ভারতের পেঁয়াজ না এলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের চরম সংকট হবে এমন গুজবে তারা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়।
এদিকে শীত মৌসুমে দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন হয়েছে পেঁয়াজ। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় মহাস্থান পাইকারী পেঁয়াজ বাজার গিয়ে দেখা যায়, অন্যান্য জেলার মত বগুড়ার মহাস্থান হাটেও পেঁয়াজের দরপতন হয়েছে। গত ২ দিন আগে যে মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম ছিল মহাস্থান বাজারে ২০০ টাকা কেজি। সেই পেঁয়াজ এখন পাইকারী বাজারে ৮০ থেকে ৮৪ টাকা কেজি।
২ দিনের ব্যবধানে মহাস্থান পাইকারী পেঁয়াজের দাম অনেক কমলেও বর্তমান বাজারে পেঁয়াজের এই দাম পেয়ে কৃষক খুশি। কিন্তু পেঁয়াজের বাজার নির্দিষ্ট স্থিতিশীল না থাকায় লোকসানের শঙ্কায় হিসাব-নিকাশ করে কিনছেন ব্যবসায়ীরা। মহাস্থান হাটে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা কৃষকেরা জানান, সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় কমছে দাম। তবে দাম কমে গেলেও লাভ হচ্ছে বলে তারা জানান।
শিবগঞ্জ উপজেলার হরিপুর থেকে আসা কৃষক অতুন চন্দ্র দেব বলেন, বর্তমান বাজার ৮০ থেকে ৮৪ টাকা কেজি পেঁয়াজ পাইকারী বিক্রি করেও আমাদের বেশ লাভ হচ্ছে। আশা করি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে থাকলেও আমাদের লোকসান হবে না।
জালাল উদ্দীন নামে আরেক কৃষক বলেন, পেঁয়াজের চাহিদা থাকায় হাটে নিয়ে আসলাম। এসে দেখি অনেক পেঁয়াজ। সরবরাহ বাড়ায় পেঁয়াজের দাম কমছে। প্রতিদিনই সরবরাহ বাড়বে। তাই যেগুলোকে বিক্রির উপযোগী হয়েছে সেগুলো বিক্রি করে দিচ্ছি। লাভও হচ্ছে বেশ।
মহাস্থান হাটে পাইকারী পেঁয়াজ ব্যবসায়ী শামীম হোসেন বলেন, আজ দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম কমায় খুব হিসাব কষে কিনতে হচ্ছে। একটু এদিক-সেদিক হলেই লসের সম্মুখীন হতে হবে। হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারত ইতিমধ্যেই পেঁয়াজ বাংলাদেশে না আসার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এবং কয়েক দিন বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেকেই ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলতে পারেনি। এখন আবহাওয়ার স্বাভাবিক হওয়ায় দেশী জাতের পেঁয়াজে বাজার ভরপুর হয়েছে। ভারতের নিষেধাজ্ঞা আর বৈরী আবহাওয়া জনিত কারণে হঠাৎ পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল বলে তিনি জানিয়েছেন। মহাস্থান হাটে খুচরা সবজি বিক্রেতা মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তা জানান, আবহাওয়া ও পরিবহন স্বাভাবিক থাকলে বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ আরও বাড়বে। এতে পেঁয়াজের দাম আরও কমবে। বাড়ার কোনো সুযোগ নেই। এখন আমদানি না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই কারণ দেশি পেঁয়াজের মৌসুম। ফলে দাম কমবেই। এ অবস্থায় অন্য দেশ থেকে আমদানি বন্ধ হলেও দেশের বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়বে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
Leave a Reply