বগুড়া প্রতিনিধিঃ লিবিয়ায় অবস্থানরত দুই প্রবাসীকে অপরহরন করে বাংলাদেশে তাদের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ আদায়কালে অপহরণ চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে বগুড়ার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আটককৃতদের মধ্যে মাহফুজুর রহমান শিপলু সরকার নামের ব্যক্তি নওদাবগা গ্রামের মৃত- আব্দুস ছাত্তারের পুত্র ও সোনাতলা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহŸায়ক। অন্য আসামী পান্নু মিয়া উপজেলার শিহিপুর গ্রামের আয়েন উদ্দিনের পুত্র।
মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায়। এসময় তিনি বলেন কাহালু উপজেলার পাপ্পু খন্দকার ও তার আপন ভাই সাঈদ খন্দকারকে ১১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে লিবিয়ায় নিয়ে যায় ১নং আসামী উজ্জল হোসেন। তিনি অঙ্গিকার করেছিলেন যে, লিবিয়ায় তাদেরকে হাসপাতাল অথবা ভালো কোম্পানিতে চাকরি দেয়া হবে।
কিন্তু সেখানে তাদেরকে কোন কাজ না দিয়ে এজাহারে উলেখিত ১নং আসামীর ছোট ভাই লিবিয়ায় অবস্থানরত সাব্বির হোসেনসহ ৮-১০ জনের একটি দল পাপ্পু খন্দকারকে লিবিয়ার ত্রিপলী শহরে এবং মোঃ সাঈদ খন্দকারকে আজদাবিয়া জামা সোনা কিয়া শহরে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। এবং দেশে তাদের পরিবারের কাছে ১ নং আসামী উজ্জল হোসেনের মাধ্যমে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবি করে।
মুক্তিপন না দিলে ঐ দুই ভাইকে বিক্রয় করে দেয়ার হুমকি দিতে থাকে তারা। এসব ঘটনায় দুপচাঁচিয়া থানায় একটি মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে এজাহার দায়ের করা হয়। মামলার সূত্র ধরে দুপচাঁচিয়া উপজেলার ৩নং ওয়ার্ড এলাকার আফসার আলীর পুত্র ১নং আসামী উজ্জল হোসেন ও জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গুডুম্বা এলাকার আজিম উদ্দিনের পুত্র ২ নং আসামী সাফাত মন্ডলকে গ্রেফতার করে। এর পর গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যানুযায়ী লিবিয়ার ত্রিপলি শহর থেকে মোঃ সাঈদ খন্দকারকে উদ্ধার করে দেশে ফেরত আনা হয়। তবে ভিকটিম পাপ্পুকে উদ্ধার করা যাচ্ছিলনা। বরং অপহরনকারীরা মুক্তিপনবাবদ ৪লক্ষ টাকা দেয়ার জন্য পরিবারের কাছে নানা ভাবে চাপ দিতে থাকে এবং নানা ভয়ভীতি দেখাতে থাকে।
এতে অপহৃত পাপ্পুর পরিবার ভয়ে অপহরণকারীদের দেয়া ডাচবাংলা ব্যাংকের একটি একাউন্ট নম্বরে ১ লক্ষ টাকা প্রাদান করে। এর পরেও বাকি টাকার জন্য চাপ দিতে থাকলে সমুদয় টাকা দিতে রাজি হয় বাদী। তখন অপহরণকারী লিবিয়া থেকে জানায় সন্ধ্যা সারে সাতটার দিকে বগুড়া শহরের চেলোপাড়া এলাকায় পান্নু নামের এক ব্যাক্তি টাকা নিতে আসবে।
এই বিষয়টি আবারো পুলিশকে অবগত করলে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম অভিযানে নামে এবং অপহৃতদের পরিবারকে শিখিয়ে দেয় যে কৌশলে বগুড়া শহরের চেলোপাড়া এলাকায় টাকা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করতে। সেই সাথে ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলের পাশেই ছদ্মবেশে অবস্থান করে। এর কিছুক্ষনের মধ্যেই অর্থাৎ ১জুন সন্ধ্যা সারে ৭টার দিকে পান্নু ও শিপলু নামের দুই ব্যাক্তি এসে মুক্তিপণের টাকা গ্রহণকালে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত পান্নু প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বিকার করে যে, লিবিয়ায় অবস্থানরত অপহরণকারী পায়েলের আপন ছোট ভাই তিনি। পরবর্তীতে তাদেরকে আটক রেখে তাদের মাধ্যমে অপহরনকারীকে ভিডিও কলের মাধ্যমে জানানো হয় ভিকটিম পাপ্পু খন্দকারকে দ্রুত বাদীর দেওয়া লিবিয়ার নিরাপদ স্থানে না পৌছে দিলে তার ভাই ও ভাইয়ের সহযোগীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তখন অপহরনকারী বাধ্য হয়ে বাদীর ছোট ভাই পাপ্পু খন্দকারকে লিবিয়ায় নিরাপদ স্থানে পৌছে দেয়।
পুলিশ সুপার আরো জানায় পাপ্পু খন্দকারকে উদ্ধারের লক্ষ্যে মুক্তিপণ বাবদ অপহরনকারীর দেওয়া ডাচ বাংলা ব্যংক একাউন্টে প্রদানকৃত এক লক্ষ টকা আটককৃত পান্নুর হেফাজত হতে উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিবিয়ায় উদ্ধার করে দেশে ফিরে আসা সাব্বির হোসেন অপহরনের পর আটকে রেখে বিভিন্ন নির্যানের লোমহর্ষক বর্ণানা দেয়। এবং লিবিয়ায় উদ্ধারকৃত পাপ্পুর কাছে ভিডিও কলে বিষয়গুলো জানতে চাই তিনিও অপহরনের লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেন।
উলেখ্য মুক্তিপণ আদায়কালে গ্রেফতারকৃত পান্নু ও শিপলু দুজন মামাতো ফুফাতো ভাই। পরে আটককৃতদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পেরণ করা হয়েছে।
ভিডিও সংবাদ দেখুন..
Leave a Reply