সোনাতলা (বগুড়া) প্রতিনিধি: একই সাথে দুই স্কুল থেকে বেতন-ভাতা নেওয়া বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার সবুজ সাথী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভৌত বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক মালিকী জাহান ও সামাজিক বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক আবুল কালামের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস।

এর আগে গত মঙ্গলবার জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রমজান আলী আকন্দ অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন। নোটিশের প্রেক্ষিতে উভয় শিক্ষকই জবাব প্রদান করেছেন বলে জানিয়েছে বগুড়া জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষক মালিকী জাহান ও আবুল কালাম আজাদ একই সাথে দুই স্কুল থেকে বেতন-ভাতা তুলেছেন। এটি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তারা উভয় প্রতারণার মাধ্যমে নেওয়া অর্থ ফেরত দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রমজান আলী আকন্দ।

প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত শিক্ষক মালিকী জাহান গত ০৭ ফেব্রæয়ারি ২০২২ সালে সারিয়াকান্দি উপজেলার নওখিলা পি. এন. উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। একই বছরের মার্চ মাস থেকে তার পদটি এমপিও হয় এবং তিনি বেতন উত্তোলন শুরু করেন। নওখিলা উচ্চ বিদ্যালয়ে তার ইনডেক্স নম্বর-এন৫৬৮২৬২২১. শিক্ষকদের বেতনের এমপিও শিট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তিনি ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত উক্ত বিদ্যালয় থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, উক্ত বিদ্যালয়ে চাকুরীরত অবস্থায় তিনি ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রæয়ারি সোনাতলার সবুজ সাথী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সবুজ সাথী উচ্চ বিদ্যালয়ে তার এমপিও ইনডেক্স নং- এন৫৬৮৫২৯৬৩. বর্তমানে তিনি সবুজ সাথী উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। ২০১৯ সালে সবুজ সাথী উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করে কর্মরত অবস্থায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি কীভাবে পূর্বের বিদ্যালয় অর্থাৎ নওখিলা পি. এন. উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বেতন উত্তোলন করলেন সেই প্রশ্নই সামনে আসে।

অন্যদিকে আবুল কালাম আজাদ ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রæয়ারি সোনাতলার সবুজ সাথী উচ্চ বিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তার ইনডেক্স নং-এন৫৬৮৫৩২২৩। বিদ্যালয়টি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এমপিও হয়। এরপর তিনি বকেয়া বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। কিন্তু অভিযুক্ত আবুল কালাম আজাদ উক্ত বিদ্যালয়ে চাকুরীরত অবস্থায় গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার বি. এ. আর খান উচ্চ বিদ্যালয় থেকেও বেতন-ভাতা তুলেছেন।

এই প্রতিবেদকের হাতে থাকা তথ্যাদি পর্যালোচনা ও বি. এ. আর খান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নানের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি উক্ত বি. এ. আর খান উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে তার ইনডেক্স নং-এন৫৬৮২৬২৭১। উক্ত বিদ্যালয়ে তার এমপিও শুরু হয় একই বছরের মে মাস থেকে। অর্থাৎ তিনি তখন উভয় বিদ্যালয় থেকেই বেতন তুলছিলেন এবং উভয় বিদ্যালয়েরই শিক্ষক!

এসব বিষয়ে গত বুধবার (৩০ জুলাই) জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রমজান আলী আকন্দের সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, ‘‘অভিযুক্ত শিক্ষকদ্বয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর তাদের বিরুদ্ধে আমরা কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলাম। তারা নোটিশের জবাব দিয়েছেন এবং অর্থ ফেরতের চালানের কপিও জমা দিয়েছেন।’’ তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘অবশ্যই নেওয়া হবে। তাদের এই জবাব আমি ডিজি স্যারের কাছে পাঠিয়ে দেবো।’’