আব্দুর রাজ্জাক, সোনাতলাঃ বগুড়ার সোনাতলায় মামলা-হামলার ভয়ে পুরুষশূন্য এক গ্রামে রাতের আঁধারে ১৪টি ঘরে আগুন লাগিয়েছে প্রতিপক্ষরা। এতে খোলা আকাশের নিচে শুকনা খাবার খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে ক্ষতিগ্রস্তরা।
২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার রাত ১১ টায় উপজেলার পাকুল্লা ইউনিয়নের যমুনার চরের খাটিয়ামারী গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে।
জানা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ি থেকে ১৮-১৯টি পরিবার সোনাতলার পাকুল্লা ইউনিয়নের খাটিয়ামারি চরে এসে বাড়িঘর নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে। সোনাতলার পাকুল্লার মির্জাপুর গ্রামের অজিত মোল্লাসহ ওই গ্রামের অনেকের জমি রয়েছে ওই খাটিয়ামারীর চরে। অজিত মোল্লা কয়েকদিন পূর্বে তার জমিতে কীটনাশক ছিটিয়ে দেন। এতে পাশের জমির মালিক মহির উদ্দিনের ধানের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ নিয়ে গত ২০সেপ্টেম্বর সকালে অজিত মোল্লা ও তার কয়েক প্রতিবেশিরা চরের জমিতে কাজ করতে গেলে অজিত ও মহিরের মধ্যে কীটনাশক ছিটানো নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটে। এতে মহির উদ্দিনের পক্ষে লাল মিয়া, জাহিদুল, সামিরন বেগম, মুন্নি বেওয়া, আরেনা বেগম, ঠান্ডা, লিটন ও মোগলু আহত হয়ে বগুড়া টিএমএসএসএস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অপরপক্ষ অজিত মোল্লাসহ তার দুই ছেলে খলিল মোল্লা ও সোহেল রানা পলাশ আহত হয়ে সোনাতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় অজিত মোল্লার ছেলে আহত সোহেল রানা পলাশ বাদী হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ ৫/৬ জনকে অজ্ঞাত রেখে সোনাতলা থানায় মামলা দায়ের করেন। আর এতেই খাটিয়ামারীর চরের ১৮-১৯ পরিবারের ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০ জন পুরুষ গ্রাম ছাড়া হয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা যায়।
আর এ পুরুষশূন্য গ্রামে রাতের আঁধারে ১৬টি ঘরে প্রতিপক্ষরা আগুন লাগিয়ে দেয় বলে অঅভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা।
এ বিষয়ে জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘জমিতে এসিড দিয়ে আমাদের ফসল নস্ট করেছে। ক্ষতির কথা বলতে গেলে অজিত পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এসে আমাদের বাড়িতে হামলা করে। এতে আমাদের ৮ জন আহত হয়ে বগুড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আর আমাদের অন্যান্য পুরুষ মানুষেরা মামলার ভয়ে বাড়িতে না থাকায় গত মঙ্গলবার আনুমানিক ১১টার সময় মিনারুল মিস্টারসহ ৮/১০ মিলে আমাদের ঘরে পেট্রল ঢেলে দিয়ে আগুন দেয়। এতে ১৪ টি ঘর পুড়ে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা প্রাণ ভয়ে বন্দরে যেতে পারছি না। খোলা আকাশের নিচে না খেয়ে থাকছি। তারা আমাদের একেবারে সর্বশান্ত করে দিয়েছে’।
জাহিদুলের স্ত্রী বলেন, ‘আমাদের গ্রামে আমার স্বামীর মনহারীর দোকান ছিল। যা দিয়ে সংসার চালাতো আমাদের। দোকানঘরসহ বাড়ি পুরে ছাই হয়েছে। একটি টাকার জিনিস আমরা পাইনি। এখন আমাদের না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। এ দিকে আমার স্বামীও বাড়ি নেই। মামলার ভয়ে আছেন’।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মিনারুলকে ফোন করে আগুন লেগে দেওয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা আমাদের রোগী নিয়ে দৌড়ের উপর আছি। আগামীকাল ফোন দিয়েন কথা বলবো বলে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে পাকুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লতিফুল বারী টিম বলেন, ‘আগুন লাগার ঘটনাটি শুনেছি। আর গ্রামে যে পুরুষশূন্য হয়েছে তাও জানি। শুধু তাই না, অনেক নারীও গ্রাম ছেড়েছেন। তাই আমি গ্রামে চৌকিদার দিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করেছি’।
এ বিষয়ে সোনাতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈকত হাসান বলেন, ‘জমিজমা নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। পরে আমাদের পুলিশ গিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। তবে গতরাতে একপক্ষের কাছে আমরা অভিযোগ পেয়েছি কে কারা যেনো আগুন লাগিয়েছে। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। আমরা এজাহারপ্রাপ্তি সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো’।
ভিডিও সংবাদ দেখুন
Leave a Reply