স্টাফ রিপোর্টারঃ বগুড়ার সোনাতলায় পুর্বশক্রতা জেরে দু’পক্ষের মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যানসহ উভয় পক্ষের ৯ জন আহত হয়েছে। ৩ মার্চ সোমবার রাত ৮টায় উপজেলার জোরগাছা ইউনিয়নের গোসাইবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
মারপিটের ঘটনায় আহতদের মধ্যে উভয় পক্ষের ৪ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তারা হলেন, গোসাইবাড়ি গ্রামের -মোঃ হামিদুল ইসলাম এর স্ত্রী মোছাঃ ফুলি বেগম (৪০) ও একই গ্রামের মোঃ মন্টু প্রাং এর স্ত্রী মোছাঃ শিউলি বেগম(৩৮)সহ অপর পক্ষের চেয়ারম্যান এর ভাই মোঃ গোলাম মোস্তফা বিটুল(৬০), জোড়গাছা গ্রামের মোঃ মোজাম প্রামাণিকের ছেলে হারুনুর রশিদ(৩৫)। জোরগাছা ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী(৫৫)সহ বাকিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা হলেন হলিদাবগা গ্রামের মোঃ ঝাল্লুর ছেলে মোঃ মামুন(২৭), শ্রী ধিরেন চন্দ্রের ছেলে রবিন্দ্র, মৃত ধলু মন্ডলের ছেলে শাহিদুল (৫০), মৃত গোলাম ফারুক এর ছেলে রিফাত আকন্দ (২৪)।
ভিডিও সংবাদ দেখুন-
সরেজমিনে জানা যায়, পুর্ব শত্রুতার জেরে গোসাই বাড়ি গ্রামের হামিদুলের ছেলে প্রবাসি এরশাদুল চরপাড়া কারিগরি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের কাছে অতর্কিত ভাবে জোড়গাছা ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানীর ভাতিজা রিফাতের পথ রোধ করে মারপিট করে। খবর পেয়ে চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী ও তার লোকজন নিয়ে এরশাদুলের বাড়িতে গিয়ে তাকে খুঁজতে থাকে। তাকে না পেয়ে বাড়িঘর ভাংচুর করে চেয়ারম্যানের লোকজন বলে স্থানীয়রা জানায়। রমজান মাসে সবাই তারাবি পড়তে যাওয়ায় পুরুষ শুন্য বাড়িতে ভাংচুর করে গালাগালি করতে থাকে। এ সময় তারাবি নামাজ শেষে হই হই শুনতে পায় এবং ভাংচুরের ঘটনা শুনতে পায় এরশাদুল পক্ষের লোকজন। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ৯জন আহত হয়।
এ ঘটনায় এরশাদুলের স্ত্রী তাহমিনা আখতার বলেন, আমার স্বামী চিকিৎসার সুবাদে মেডিকেলে আছে। চরপাড়ায় কি হয়েছে তা আমি জানিনা, তবে সবাই যখন তারাবি পড়তে যায় ঠিক সেই সময়ে চেয়ারম্যান ও তার দলবল নিয়ে এসে বাড়ি ঘর ভাংচুরসহ আমার শ্বাশুড়ি, চাচি শ্বাশুড়ি ও ভাসূরকে মারপিট করে এবং নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
রিফাতের সাথে আপনার স্বামীর আগে থেকে কোন শত্রুতা আছে কি না এবিষয়ে তিনি বলেন, মাস দেড়েক আগে আমাকে নিয়ে ভেলুরপাড়া চারমাথা ঔষধ কিনতে গেলে সেখানে চেয়ারম্যানের ভাতিজা রিফাত আমার স্বামীকে মোটরসাইকেল কেনাকে কেন্দ্র করে চর থাপ্পড় মারে। বিষয়টি আমার বাবাকে খুলে বলি। আমার বাবা আমাকে ও আমার স্বামীসহ চেয়ারম্যানের বাড়িতে বলতে যায়। সেখানে রিফাত ও চেয়ারম্যানের আত্বীয় স্বজন মিলে আবার বাবাকে, স্বামীকে এবং আমাকে মারপিট করে। আমার বাবার কপাল ফেটে যায়। আমরা হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করে বাড়িতে স্বাভাবিক ভাবেই ছিলাম।
এ বিষয়ে গ্রাম বাসির আবু হানিফ নামের এক যুবক বলেন, আমরা মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়াছিলাম। নামাজ শেষে বন্ধুর বাড়ি যেতেই চিল্লাচিল্লি শুনতে পাই । ইতিমধ্যে মূসল্লিরা হই দিয়ে বলে গ্রামে ডাকাত পড়ছে। সেখানে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়ে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
এ ঘটনায় আহত রিফাত জানান, দেড় মাস আগে চেয়ারম্যানের মেয়েসহ দুজন লোহাগাড়া থেকে দাওয়াত খেয়ে ভেলুরপাড়া বাড়ি আসার সময় মোটরসাইকেলে ভ্যানের পিছন থেকে ব্যাটসাউন্ড করে এরশাদুল। চেয়ারম্যানের মেয়ে বাড়িতে এসে বিষয়টি আমাদেরকে বললে বিচার সালিশের মাধ্যমে ভূল স্বীকার করে সমাধান হয়ে যায়। গতকাল সন্ধ্যায় চরপাড়া বাজারে কিছু জিনিস কিনতে গেলে এরশাদুল সাবিরুল, সৌরভ মিলে রাস্তায় পথরোধ করে আমাকে মারপিট করে।
এ ঘটনায় আহত চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী বলেন, আমার ভাতিজা রিফাত কে মারপিটের ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে মারপিটের বিষয়ে জানতে গেলে তারা আগে থেকেই পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে আমাদেরকে হামলা করে। আমার ভাইসহ দুজন গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে বগুড়া নেয়া হয়েছে। কেন হামলা চালায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা আওয়ামী লীগের দোসর। সে সময় তারা জমি দখল ও সুদের কারবারি বিষয়ে একটি প্রতিবেদনে স্বাক্ষাৎকার দেই। এ কারনে তারা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। ভাতিজা রিফাত কে কি কারনে পথরোধ এবং মারপিটের কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে ওই গ্রামে দু জায়গায় মেলা হয়। সেই মেলায় তাদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। সেই কারণে তাকে মারপিট করেছে।
এ বিষয়ে সোনাতলা থানা অফিসার ইনচার্জ মিলাদুননবী বলেন, মারপিটের ঘটনায় কোন পক্ষেই অভিযোগ বা মামলা করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply