আব্দুর রাজ্জাক, স্টাফ রিপোর্টারঃ বগুড়ার সোনাতলা উপচেলায় বোরো চাষে বাধার সম্মুখিন হয়েছেন ৫ গ্রামের কৃষকরা। এতে প্রায় ৫ শত বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে কৃষকদের মাঝে। এর ফলে পরবর্তীতে খাদ্য সংকটের আশংকায় রয়েছেন স্থানীয়রা। বিয়টি থেকে পরিত্রাণ চেয়ে সরকারের ৩টি দফতরে অভিযোগ করেছে কৃষকরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের সাতবিলে প্রতি বছরের ন্যায় বোরো চাষ করতে গেলে যারা সরকারী খাস বিল (জলাশয়) লিজ নিয়েছে তারা উক্ত বিলের অন্য ৫শ বিঘা জমিতে শ্যলো মেশিনের দ্বারা নিজ জমি থেকে পানি সেচ দিতে বাধা প্রদাণ করছে। বাধা প্রাপ্তের পর স্থানীয় কৃষকেরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মধুপুর ইউনিয়নের উত্তর গজারিয়া, মধুপুর, শালিখা, দড়িহাঁসরাজ ও হাসঁরাজ গ্রামের কৃষকদের বেশিরভাগ জমি সাতবিলে। তারা প্রতিবেদককে বলেন, বোরো ফসলই আমাদের সম্বল। এই সময় ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় সাতবিলে পানি থাকায় কোন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়না। ১৪৩২ বাংলা সন থেকে ৩ বছরের জন্য মধুপুর ইউনিয়ন মৎসজীবী সমবায় সমিতি লিঃ এই বিলের মাঝখানে থাকা ৪৪.১৫ একর খাস জলাশয় লীজ নেয়। ওই বিলে খাস জলাশয় ও জমি ছাড়াও প্রায় ৫শ বিঘা বিভিন্ন ব্যক্তির মালিকানা জমি আছে। সেসব জমি থেকে পানি শুকিয়ে গেলে নিজস্ব সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে বিলের উচু-নিচু জমিতে তারা বোরো ধানের চাষ করেন। চলতি মৌসুমে বোরো ধানের চাষের জন্য নিচু জমি থেকে উচু জমিতে পানি সেচ দিতে গেলে উক্ত সমিতির লোকজন কর্তৃক বাধা প্রাপ্ত হচ্ছেন কৃষকেরা।
ভুক্তভোগি কৃষক এনামুল বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে বিলের উচু-নিচু সব জমি বোরো ধানের চাষ করি। এ কারনে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে নিচু জমি থেকে উচু জমিতে পানি সেচের প্রয়োজন হয়। শ্যালো মেশিন দিয়ে নিজের নিচু জমি থেকে উচু জমিতে পানি দিতে গেলে বাধা দেয়। এক পর্যায়ে তারা আমার শ্যালো মেশিনের পাইপ, টিউবওয়েল খুলে নিয়ে যায়। পরে তাদের কাছে গেলে প্রথমে শাসায় পরে ফেরত দেয় এবং বলে এর পর মেশিন দিয়ে পানি তোলার চেষ্টা করলে মামলা করবো। এই ভয়ে আমরা জমিতে চাষ করতে পারছিনা। কারা খুলে নিয়ে যায় তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ নেতা রেজা, যুধিষ্টি ও হরেকৃষ্ণর লোকজন যারা লীজ নেওয়া জলাশয় পাহারা দেয়।
কৃষক ছামেদ আলী, জরিপ উদ্দিন শেখ, রিপন, জোসনা, আবুল হোসেন বলেন, এই সাতবিলে খাস জমি ছাড়াও আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তিসহ আমাদের কবলাকৃত জমিও আছে। পানি থাকার কারনে এখানে শুধুমাত্র বোরো ধান ছাড়া অন্য কোন ফসল ফলানো যায়না। তাই প্রতিবছর আমরা এই সময়ে এখানে বোরো ধানের চাষ করি। কিন্তু এবার সমিতি লোকজনেরা আমাদের জমি থেকে পানি তুলতে দিচ্ছেনা। এর ফলে আমরা চাষ করতে পাচ্ছিনা। পানি তুলতে গেলে তারা বিভিন্ন ভাবে মামলা ও পুলিশের ভয় দেখিয়ে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। তাই আমরা নিরুপায় হয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এ বিষয়ে মধুপুর ইউনিয়ন মৎসজীবী সমবায় সমিতির লিঃ এর সাধারণ সম্পাদক যুধিষ্টি বলেন, আমরা ৪৪.১৫ একর খাস জলাশয় লীজ নিয়েছি। ওখানে প্রায় ১৬০ একর খাস জমি আছে। কিন্তু ওখান থেকে পানি তুললে আমাদের মাছ চাষে সমস্যা হয় তাই আমরা বাধা দিয়েছি। ৪/৫ বিঘা জমিওয়ালাদের বর্ডিং খরচ দিয়েছি। জমিতো ওরাই চাষ করে আমাদের শুধু পানি ও মাছ দরকার। পানি না থাকলে ব্যবসা নেই।
মধুপুর ইউনিয়ন মৎসজীবী সমবায় সমিতির লিঃ এর সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি রেজা বলেন, ওদের পানি তোলার কারনে পুরো বিল শুকিয়ে আমাদের মাছ নষ্ট হয়ে যায়। ওদের সুবিধা বুঝলে তো হবে না। সরকার আমাদের লীজ দিয়েছে। তাই আমরা বিলে জমি ব্যবহার করতেছি।
উক্ত বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু কৃষকদের ব্যপার তাই আমরা শিঘ্রই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাবেয়া আসফার সায়মা অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কৃষকেরা আমার নিকট এসেছিল। আমরা বিষয়টি দেখছি।
এ ব্যপারে উপজেলা চেয়ারম্যান মিনহাদুজ্জামান লীটন বলেন, আমি ঢাকায় থাকার কারনে অভিযোগের বিষয়ে কিছু জানিনা।
সোনাতলা সংবাদে লিখতে পারেন আপনিও। যে কোনও তথ্য ও ভিডিও দিন নিচের WhatsApp নাম্বারে। প্রয়োজনে আপনার নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হবে।
মোবাইল: ০১৭৭৪৬৫০৬৭১
E-mail: sonatalasangbad@gmail.com