বায়েজিদ, গাইবান্ধাঃ গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার পবনাপুর গ্রামের মাঠে চোখে পড়ে নেপেন ও সুভাষিণী দম্পতির মই দিয়ে হাল চায়ের দৃশ্য। অর্থাভাবে যখন গরু দিয়ে হালচাষ করা দায়, তখন স্ত্রী সুভাষিণীর সহযোগিতায় মই দিয়ে নিজেরাই করছেন হাল চাষ।
তারা কখনও অন্যের জমিতে বর্গাচাষ, কখনও খালে-বিলে মাছ ধরে চলে জীবিকা। সাত সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণের দায়ভার চল্লিশ বছরের নেপেনের। এ কাজে পালাক্রমে একজন গরু ও অপরজন চাষির ভুমিকা পালন করতে দেখা গিয়েছে।
অন্যের জমি বর্গাচাষের পাশাপাশি খালে-বিলে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে যা মেলে তাই দিয়ে মেটাতে হয় সংসারের মৌলিক চাহিদা।
মাঠে ইরি ভ্রম মৌসুমে যেখানে আদরি পিসি চন্দ্রের সাহায্যে জমির তৈরি ব্যস্ত পার করছে কৃষকেরা সেখানে ব্যতিক্রম শুধু নেপেন-সুভাসিনী দম্পতি। তীব্র ঠান্ডা অপেক্ষা করে পানিতে ভিজে জমি সমান করতে শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে হালচাষ করছেন তারা। বাশের তৈরি মইয়ের দু'পাশে দড়ি বেধে দু'হাতে মই টানছেন গরুর ভূমিকায়। আর এতেই কাদাজলে ভেজা উচু নিচু জমি সমান হয়ে চাষের উপযোগী হয়ে উঠছে।
তারা জানান, তাদের নিজেদের কোনো জমি নেই। প্রায় এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন তারা। আজ দশ শতক জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের জন্য মই দিচ্ছেন। বর্গা নেওয়া জমি থেকে যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয় তার অর্ধেক পান জমির মালিক। বাকি ধান দিয়ে সারা বছরের ভাতের যোগান মেটাতে হয়। তাই উৎপাদন খরচ কমাতে টাকা দিয়ে গরুর হাল না কিনে নিজেরাই জমিতে মই দিচ্ছেন।
তারা আরও বলেন, তাদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে মাধব এসএসসি পাশ করেছে। ছোট ছেলে নিখিল, মেয়ে লক্ষ্মী ও প্রতিমা হাইস্কুলে পড়াশুনা করছে। এছাড়া অর্জুন নামে কোলের এক সন্তান রয়েছে তাদের।
পবনাপুর এক নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি চান মিয়া বলেন, নেপেন-সুভাসিনি দম্পতি আমার প্রতিবেশী। তারা জেলে পরিবারের সদস্য। সমাজে টিকে থাকার জন্য তারা লড়াই করে চলেছেন।
পবনাপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম বলেন, জমিতে পানি এবং হাল চাষের পর মাটি সমান করতে মই দেওয়া হয়ে থাকে। সাধারণত এ কাজটি গরু দিয়ে করা হয়ে থাকে। কিন্তু নেপেন-সুভাসিনি দম্পতি আর্থিক সংকটের কারণে নিজেই এ কাজটি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সোনাতলা সংবাদে লিখতে পারেন আপনিও। যে কোনও তথ্য ও ভিডিও দিন নিচের WhatsApp নাম্বারে। প্রয়োজনে আপনার নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হবে।
মোবাইল: ০১৭৭৪৬৫০৬৭১
E-mail: sonatalasangbad@gmail.com