গাবতলী (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ বগুড়ার গাবতলীতে যৌতুক দাবীর টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে স্বামী। থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেছে এবং ঘাতক স্বামীকে গ্রেফতার করেছে। গত শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার বালিয়াদিঘী ইউনিয়নের কালাইহাটা উত্তরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বালিয়াদিঘী ইউনিয়নের তল্লাতলা গ্রামের আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে গাবতলী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
মামলাসূত্রে জানা গেছে, বালিয়াদিঘী ইউনিয়নের তল্লাতলা গ্রামের কৃষি শ্রমিক আনোয়ার হোসেন তার একমাত্র মেয়ে মীম আকতার (২৫)কে ২০১৬সালে একই ইউনিয়নের কালাইহাটা উত্তরপাড়া গ্রামের করিম মন্ডলের ছেলে ইব্রাহিম মন্ডল (২৬) এর সঙ্গে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে দেয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে ৭৫হাজার টাকা ইব্রাহিমকে নগদ প্রদান করে। বিয়ের পর কিছুদিন দাম্পত্য জীবন ভালো কাটলেও মাঝে মধ্যে আরো যৌতুকের জন্য মীমকে তার স্বামী ইব্রাহিম শারীরিক ও মানষিকভাবে নির্যাতন করত। পরে অনেকটা বাধ্য হয়ে গত মাঘ মাসে সুবোদ বাজারের একটি এনজিও থেকে ৩০হাজার টাকা সুদের উপর ঋণ নিয়ে ইব্রামিক দেয় তার শ্বশুর আনোয়ার হোসেন। এর কয়েকদিন পর ব্যবসা করার জন্য আবারো ১লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে মীমকে চাপ দিতে থাকে। মীম যৌতুকের আরো ১লাখ টাকা এনে দিতে অস্বীকার করলে ইব্রাহিম আবারো মীমকে শারীরিক ও মানষিকভাবে নির্যাতন শুরু করে। যৌতুকের ওই টাকা দিতে না পেরে মেয়ে ও নাতীদের নিজের বাড়ীতে নিয়ে আসেন মীমের বাবা আনোয়ার হোসেন। সংসার জীবনে তাদের দুটি পূত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। প্রথম সন্তান মিজানের বয়স চার বছর এবং দ্বিতীয় সন্তান আব্দুস সোবহানের বয়স মাত্র ৬মাস। এরই মধ্যে গত ৫মাস পূর্বে ইব্রাহিম প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে গোপনে সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের কালিয়াহাতি গ্রামে ২য় বিয়ে করে। পরে মীম বিষয়টি জানতে পেরে বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যা এখনও বিচারাধীন রয়েছে। পরবর্তীতে অবুঝ দুটি সন্তানের কথা চিন্তা করে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় গত ৪আগষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে মিটিংয়ের মাধ্যমে মীমাংসা করে ইব্রামিক তার স্ত্রী মীমকে বাড়ীতে নিয়ে যায়। বাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার পর আবারও শুরু হয় নির্যাতন। মেয়ের উপর আবারো নির্যাতনের কথা শুনে মীমের বাবা আনোয়ার কিছু টাকা ধার দেনা করে দেওয়ার অঙ্গিকার করলেও থামেনি মেয়ের উপর নির্যাতন। এরই একপর্যায়ে গত ৭আগষ্ট রাত সাড়ে ১২টায় মীমকে মেরে সু-কৌশলে নিজ ঘরে আটকে রেখে মীমের বাবাকে ফোন করে বলে আপনার মেয়ে খুব অসুস্থ মেডিকেলে নিতে হবে। খবর পেয়ে মীমের বাবা-মা ছুটে এসে ওই রাতেই সিএনজি যোগে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মীমকে মৃত ঘোষনা করে। এঘটনায় নিহত মীমের বাবা আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ইব্রাহিমসহ ৩জনকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় বাগবাড়ী ফাঁড়ি পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘাতক ইব্রাহিমকে গ্রেফতার করেছে। এ ব্যাপারে গাবতলী মডেল থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, মীমকে যৌতুকের জন্য হত্যা করা হয়েছে। গতকাল রবিবার সকালে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
Leave a Reply