বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ায় পুলিশের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের ভয়াবহ সংঘর্ষে কমপক্ষে ৪ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। দুপচাঁচিয়ায় একজন এবং বগুড়া শহরে ৩জনের মৃত্যু হয়েছেন। শতাধিক গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন কয়েক’শ বিক্ষোভকারী। সকাল থেকে দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে বগুড়া শহর। এর বাইরে দুপচাঁচিয়া এবং শেরপুরে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শিরা জানান, রোববার বেলা ১১টার দিকে একদল ছাত্র-জনতা বড়গোলা হয়ে সাতমাথার দিকে আসার চেষ্টা করলে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এসময় পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ মুহুর্মহু টিয়ারসেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে। ইটপাটকেল মেরে বিক্ষোভকারীরা জবাব দেয়। এসময় পুলিশের গুলিতে দুইজন নিহত হয়েছে। এছাড়া শহরতলীর গোদারপাড়া এলাকায় একজন নিহত হয়েছেন বলে জানাগেছে। নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে। দুপচাঁচিয়ায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে গুলিতে এক আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। নিহত মনির হোসেন (৩০) বগুড়ার কাহালু উপজেলার বীরকেদার গ্রামের বাসিন্দা বলে প্রাথমিকভাবে জানাগেছে। স্থানীয়রা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের ডাকা দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে রোববার সকাল ১১টার দিকে দুপচাঁচিয়ায় ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। ছাত্রদের সাথে শত শত অভিভাবক মিছিলে অংশ নেন। মিছিলটি একপর্যায়ে থানার দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের দমনের চেষ্টা চালায়। এসময় বিক্ষোভকারী ইট পাটকেল মেরে পাল্টা জবাব দেয়। উভয় পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলাকালে মনির হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। দুপচাঁচিয়া থানার ওসি সনাতন বাবুৃ একজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এখানে কমপক্ষে ১৫জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন।
রোববার সকাল ১০টার পর থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা বগুড়া শহরের দিকে আসতে থাকে। এসময় ছাত্রলীগ-যুবলীগের শতাধিক নেতাকর্মী সাতমাথায় পুলিশের উপস্থিতিতে স্বশস্ত্র মহড়া দেয়। বেলা ১১টার দিকে চারিদিক থেকে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা সাতমাথার প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মিরা বাধা দেয়। বাধা অতিক্রম করে ছাত্র-জনতা সাতমাথায় ঢুকে পড়লে শাসক দলের নেতাকর্মিরা পালিয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা আওয়ামীলীগের অফিসে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় আওয়ামীলীগ অফিসে জমা করে রাখা দুই বস্তা ককটেল এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে যায় বিক্ষুব্ধরা। পাশের টিএন্ডটি অফিসের ভিতরে থাকা একটি গাড়ীতেও আগুন লাগানো হয় এসময়। দীর্ঘ সময় সাতমাথা দখরে রাখার পর দুপুরে পুলিশ টিয়ারসেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট মেরে ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে ছাত্ররা। পুলিশ মুহুর্মুহু টিয়ারসেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড মেরে ছাত্র-জনতাকে দমানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। বিকেল ৩টার পর ছাত্র-জনতা পুলিশকে হটিয়ে আবারও সাতমাথার দখলে নেয়। এরপর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল। একই সাথে বড়গোলা এলাকা সকাল থেকে দখলে রেখেছে বিক্ষোভকারীরা। দিনভর পুলিশের সাথে লড়াই চলছে সেখানেও। এদিকে, সংঘর্ষ চলাকালে জেলার প্রধান ডাকঘর এবং সদর উপজেলা গেষ্টরুমে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভকারীদের শক্ত অবস্থানের কারনে ফায়ার সার্ভিস কর্মিরাও আগুন নেভাতে আসতে পারেনি। দিনভর সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক বিক্ষোভকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া টিয়ারসেলের আঘাতে আর কয়েক’শ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শেরপুরে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের দিনভর সংঘর্ষ হয়েছে। সেখানেও অনেকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
Leave a Reply