মুনসুর রহমান তানসেন, কাহালু (বগুড়া) থেকেঃ শষ্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত বগুড়ার কাহালু উপজেলার বিভিন্ন মাঠে রবি মৌসুমে আলু, সরিষা, বিভিন্ন প্রকার সবজি ও বীজতলা মিলে প্রায় ১৫ হেক্টর জমি চাষাবাদ করা হয়েছে। তবে বৃষ্টিপাতের কারণে চলতি মৌসুমে কমেছে সরিষা চাষ এবং বেড়েছে আলুর চাষাবাদ। বৃষ্টির পানি জমে থাকায় আবার প্রায় ৪ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমি পতিতও রয়েছে।
সরোজমিনে দেখা গেছে, সুর্যের আলোয় শীতের কুয়াশা ভেদ করে সবুজ আর হলুদে রাঙানো উপজেলার প্রতিটি ফসলি জমির মাঠ। কোথাও বোরো ধান চাষাবাদের জন্য তৈরী করা হয়েছে বীজতলা। চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাতের কারণে চাষাবাদে কিছুটা বিলম্ব হলেও ফসলে তেমন রোগবালাইয়ের আক্রমণ নেই। আলুর গাছ গজানোর পর প্রথমদিকে লেট বøাইট রোগের আক্রমণ হলেও কৃষি অফিসের পরামর্শ ও চাষিদের সচেতনতায় তা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে চলতি মৌসুমে আলু ও সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিছু জমি পতিত থাকলে বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় উৎপাদনে তেমন ঘারতি হবেনা বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগের লোকজন।
চাষিদের তথ্যমতে, জমির পত্তনী মূল্য ও ফসল চাষাবাদের খরচ বৃদ্ধি হওয়ায় এখন নীচু জমি ও ভিটেমাটি ছাড়া প্রায় সব জমিতেই বছরে তিনটি করে ফসল চাষাবাদ করতে হয়। অতি বৃষ্টির কারণে নীচু জমিতে পানি জমে থাকায় সেখানে সরিষা চাষ করা সম্ভম হয়নি। অনেকে পানি শুকিয়ে গেলে কিছুটা বিলম্বে সেই জমিতে আলু চাষাবাদ করেছে এবং পতিত জমিতে আগাম বোরো ধান চাষাবাদের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
তথ্যমতে, বিশেষ করে যারা জমি পত্তন নিয়ে চাষাবাদ করেন, বছরে দুটি ফসল ফলালে তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলানো মুশকিল হয়ে পড়ে। যারফলে কিছুটা সময়ের হেরফের বা কষ্ট হলেও অধিক ফলন ও লাভের আশায় তিনটি ফসলই তারা চাষাবাদ করেন। জমির প্রকার ভেদে প্রতি বছর একবিঘা জমির পত্তনী মূল্য ১৮ হাজার টাকা থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। জমির পত্তনী মূল ও চাষাবাদের খরচ হিসেব করেই চাষিদের ফসল ফলাতে হয়। তিন ফসলি জমিতে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য চাষাবাদের ফসলের মধ্যে রয়েছে বোরো ও আমন ধান এবং আলু-সরিষা। এছাড়াও মরিচ, বেগুন, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন প্রকার শীতকালীন শাকসবজি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এখানে মোট ফসলি জমির পরিমাণ ১৯ হাজার ৪৩২ হেক্টর। তারমধ্যে চলতি রবি মৌসুমে ১৪ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। পতিত রয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমি। সূত্রমতে, ৭ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আলু, ৬ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে সরিষা, ৪৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার সবজি ও ১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের জন্য বীজতলা তৈরী করা হয়েছে।
চলতি মৌসুমে আলু চাষাবাদের টার্গেট ছিল ৬ হাজার হেক্টর জমিতে এবং সরিষা চাষের টার্গেট ছিল ৯ হাজার হেক্টর জমিতে। গত বছরের অর্জিত আলুর মূল্য অনেকটা বেশি পাওয়ায় এবছর চাষিরা আলু চাষে বেশি আগ্রহী হওয়ায় টার্গেটের চেয়েও প্রায় ১ হাজার ৩০০ হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষাবাদ হয়েছে। অপরদিকে শুধু বৃষ্টিপাতের কারণে নীচু জমিতে এবার সরিষার চাষাবাদ ঠিকমত করতে না পারায় টার্গেটের চেয়ে ২ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে কম সরিষা চাষাবাদ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, চলতি বৃষ্টির কারণে চাষাবাদ কিছুটা বিলম্বে হয়েছে এবং সরিষার চাষাবাদ কম হয়েছে। তবে গত বছরের আলুতে বেশি দাম পাওয়ায় এবার আলু চাষেই বেশি আগ্রহী ছিল চাষিরা। আশা করা হচ্ছে চলতি মৌসুমে আলু ও সরিষার বাম্পার ফলন হবে।
Leave a Reply