1. sonatalasangbad@gmail.com : সোনাতলা সংবাদ :
বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

সারিয়াকান্দির যমুনা নদীতে অবৈধভাবে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব

  • বুধবার, ৫ মার্চ, ২০২৫
  • ১০৩

সোনাতলা সংবাদ ডেস্কঃ বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। বাঙালি নদী থেকেও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কাজলার জামথল ঘাটসংলগ্ন এলাকায় পাঁচটি এস্কেভেটর বসিয়ে শতাধিক অনুমোদনবিহীন ড্রাম ট্রাক ও মাহিদ্রা ট্রাক্টর দিয়ে চর থেকে মাটিকাটা হচ্ছে। এখানে বোরিং করেও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

কামালপুর ইউনিয়নের রৌহাদহ পয়েন্টের ৫০ লাখ সিএফটি বালু বিক্রির পর সেখানে আবারও বাল্কহেড দিয়ে চর কেটে বালু উত্তোলন চলছে। হাটশেরপুর ইউনিয়নের নিজবলাইল বাজারের সামনে যমুনা নদী থেকে মাহিন্দ্রা ট্রাক্টর দিয়ে কাটা হচ্ছে বালু। সবগুলো পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তাদের ছত্রছায়ায় যোগ দিয়েছেন কিছু আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দও। নষ্ট হচ্ছে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। প্রশাসন বলছে দ্রুতই সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের জামথল বা মাদারগঞ্জ ঘাটে নামলেই চোখে পরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। বালু উত্তোলনের স্থান থেকে ৫০ মিটার এলাকার মধ্যে ৫৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী সংরক্ষণের কাজ চলমান রয়েছে। গত কয়েক মাস ধরেই এখানে বেড়াপাঁচবাড়িয়া চর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এখানে ছয়টি এস্কেভেটর বসিয়ে চর কাটা হচ্ছে। ফলে এ চরে বেশ বড়বড় নতুন করে ক্যানেলের সৃষ্টি হয়েছে। বালুগুলো শতাধিক অনুমোদনবিহীন ডাম্প ট্রাক এবং কৃষি কাজে ব্যবহৃত মাহিন্দ্রা ট্রাক্টর দিয়ে পরিবহন করা হচ্ছে, যা জামালপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এদিকে চরের দুই ফসলি জমি থেকে জোর করে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এখানে বেশ কয়েকটি বোরিং মেশিন বসিয়েও মাটির গভীর থেকেও উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। এখানে বালু উত্তোলনের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি রাশেদ মিয়া, কাজলা ইউনিয়ন বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বেলাল এবং মাদারগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান সাকু এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বেশকিছু নেতৃবৃন্দ। তবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি সবাই অস্বীকার করেছেন।

হাফিজুর রহমান সাকু বলেন, আমার বাড়ি তো জামালপুর, আমি কীভাবে সারিয়াকান্দি গিয়ে বালু তুলব? ওখানে ওখানকার স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত। উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের রৌহাদহ পয়েন্টেও অবৈধভাবে বালু কেটে স্তুপ করা হচ্ছে গত কয়েকদিন ধরেই। এখানে বেশ কয়েকটি বাল্কহেড দিয়ে বালু পরিবহন করে নিয়ে আসা হচ্ছে। বালুগুলো যমুনা নদীর চন্দনবাইশা মৌজা থেকে গভীর খননযন্ত্র বসিয়ে কাটা হচ্ছে। এখানে গত কয়েক মাস আগে একই পদ্ধতিতে ৪০ লাখ সিএফটি বালু উত্তোলন করা হয়। যেখানে গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে যৌথবাহিনীর অভিযানে ১০ জন বালুদস্যুকে আটক করা হয়। পরের দিন ২৪ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে প্রত্যেকের নামে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে তাদের ছেড়ে দেন।

সেখানে তিনি উত্তোলিত বালুগুলো মৌখিকভাবে জব্দ করেন। কিস্তু তার কয়েকদিন পরেই অবৈধভাবে উত্তোলিত বালুগুলো বিক্রি করেন স্থানীয় বিএনপি’র অসাধু নেতৃবৃন্দ। এর কয়েকদিন পরেই একই ঘটনায় স্থানীয় নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান উল আলমকে মারপিট করা হয়। পরে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন তাকে উদ্ধার করে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেন। এই একই পয়েন্টে আবারো গত কয়েকদিন ধরেই অবৈধভাবে বালু কেটে বাল্কহেড দিয়ে পরিবহন করে স্তুপ করা হচ্ছে এবং কিছু বালু ডাম্প ট্রাক দিয়ে বিক্রিও করা হচ্ছে। এখানে বালু উত্তোলনের নেতৃত্বে রয়েছেন কামালপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সহ সভাপতি হিটলু এবং স্থানীয় বিএনপি’র বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা।
তবে হিটলু বলেন, আমি কখনোই বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত নই, আমার কোনও বালুর পয়েন্ট নেই। ওখানে সাবেক চেয়ারম্যান দুলালের নেতৃত্বে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের নিজ বলাইল বাজারের পূর্ব পাশে যমুনা নদী থেকেও ১০ থেকে ১২টি মাহিন্দ্রা ট্রাক্টর দিয়ে রাতের বেলা থেকে শুরু করে সকাল ৮টা পর্যন্ত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালুগুলো যমুনা নদীর চর কেটে উত্তোলন করা হচ্ছে। এখানে বালু উত্তোলনে স্থানীয় বিএনপি নেতা বাবুলসহ বেশকিছু নেতারা যুক্ত হলেও এ পয়েন্টে এখনও বালু উত্তোলনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতা হাটশেরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল ওয়াকি শিলুই রয়েছেন।

উপজেলার বাঙালি নদীর বিভিন্ন এলাকায় বালু খনন যন্ত্র ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালুগুলো দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন পুকুর এবং জলাশয়গুলো ভরাট করা হচ্ছে। বাঙালি নদীতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যারা বালু উত্তোলন করতেন, এখনো তারাই এখানে বালু উত্তোলন করছেন।

এ গ্রামের কৃষক রেজা, সাত্তার, ভিক্ষু জানান, আমাদের প্রায় ২৫ বিঘা জমির মাটি এস্কেভেটর বসিয়ে জোর করে কেটে নিয়ে গেছে প্রভাবশালী নেতারা। জমিতে এখন ১৫ ফিট ক্যানেলের সৃষ্টি হয়েছে। জমিগুলোতে বছরে দু’টি করে ফসল পাওয়া যেত। এখন আমরা কী খেয়ে বাঁচব। তাছাড়া বালু পরিবহনের ফলে জামথল গ্রামের রাস্তা দিয়ে চলাচল একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া এভাবে বালু তোলায় আমাদের গ্রামকে রক্ষার জন্য নদী সংরক্ষণ কাজটিও হুমকির সম্মুখিন হচ্ছে। গত সরকারগুলোর সময় তো এরকমের পরিবেশ কখনো সৃষ্টি হয়নি।

চন্দনবাইশা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি চাঁন মিয়া বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই রৌহাদহ পয়েন্টে চন্দনবাইশা মৌজা থেকে বালু কেটে স্তুপ করা হচ্ছে। আমি অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার রহমান বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। অভিযান পরিচালনা করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নিউজে সর্বশেষ

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট