মুনসুর রহমান তানসেন, কাহালু থেকেঃ বগুড়া-৪ আসনের বিভিন্ন এলাকায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে। ভোটারদের মতে এই নির্বাচনে নৌকা ও ঈগলের মধ্যেই হবে মূল লড়াই। আলোচিত ইউটিউবার হিরু আলম প্রচারে মাঠে নামলেও এবার তাকে নিয়ে তেমন মাথা ব্যাথা নেই সাধারণ ভোটার ও প্রার্থীদের ।
কাহালু-নন্দীগ্রাম উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন, দুটি পৌরসভা এবং তালোড়া পৌরসভার আংশিক নিয়ে গঠিত বগুড়া-৪ আসন। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ২৩৯ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৭৩ হাজার ১১০ জন। এখানে পুরুষ ভোটারের চেয়ে মহিলা ভোটার ১ হাজার ৮৭১ জন বেশী। এই আসনে মোট কেন্দ্র সংখ্যা ১১৪ টি ও ভোটকক্ষ সংখ্যা ৭৭২ টি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য এই আসনে অংশ নেওয়া প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী মোট পাঁচজন।এদের মধ্যে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল জাসদের এ, কে, এম রেজাউল করিম তানসেন ( নৌকা), সাবেক বিএনপি নেতা সতন্ত্র প্রার্থী ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লা (ঈগল), বাংলাদেশ কংগ্রেস প্রার্থী আলোচিত মোঃ আশরাফুল আলম (ডাব), সতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মোশফিকুর রহমান (ট্রাক) ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাহীন মোস্তফা কামাল (লাঙল) প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়েছে বিএনপি থেকে ৪ বারের নির্বাচিত সাবেক এমপি ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লা। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনদিঘী এলাকায় তাঁর উপর দুর্বৃত্তদের হামলা ও তাঁর ফিলিং স্টেশনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর নির্বাচনী এলাকায় আরও বেশি আলোচনা হচ্ছে তাকে নিয়ে। তাঁর উপর হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১২ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লার পক্ষে ভোট চাওয়ার অপরাধে ইতিমধ্যে বিএনপি থেকে বহিস্কার করা হয়েছে দুজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন বিএনপি নেতাকে। সম্প্রতি থানা বিএনপির সভাপতি ফরিদুর রহমান ফরিদকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বিএনপির এই ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে এখন বিএনপির অনেকেই প্রকাশ্যে ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লার পক্ষে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। বিএনপি কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লার পক্ষে প্রচারণা থেকে বিরত রাখতে পারছেনা বিএনপি নেতাকর্মীদের।
মালঞ্চা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি সামাদ মন্ডল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুঞ্জরুল হক তালুকদার, বিএনপি নেতা একরামুল , ছামছুল ইসলামসহ অসংখ্য নেতাকর্মী জানান, ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লার পক্ষে বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মীরাই ভোটাদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। থানা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাজ্বি আব্দুল মান্নান, থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাজনুর রহমান, মহিউদ্দিন মোহন, সাবেক ভিপি আইনুল ইসলাম জানান, ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লার উপর হামলা করে তাঁর জনপ্রিয়তা কেউ ঠেকাতে পারবেনা। নির্বাচন বিরোধীরা যতই চেষ্টা করুক আমরা নির্বাচনী মাঠে আছি এবং থাকবো। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভোটারদের মুখে শোনা গেছে বর্তমানে সতন্ত্র প্রার্থী ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লাকে নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে। তাদের মতে ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লার (ঈগল) প্রতিক আর ১৪ দলীয় জোটের শরিক এ, কে, এম রেজাউল করিম তানসেনের (নৌকা) প্রতিকের মধ্যেই এবার মূল লড়াই হতে পারে।
এদিকে জাসদ নেতা এ, কে, এম রেজাউল করিম তানসেন এবার (নৌকা) প্রতিক নিয়ে নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী এলাকা। তাঁর পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন অনেকেই। তাঁর কর্মী-সমর্থকদের মতে নৌকা প্রতিক পাওয়ায় অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন এ, কে এম রেজাউল করিম তানসেন। এ, কে, এম রেজাউল করিম তানসেনের কিছুটা সমালোচনা থাকলেও নৌকা প্রতিক নিয়ে মাঠে থাকায় সকল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সমর্থন পাওয়ার আশা তাঁর কর্মী-সর্থকদের। নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী জানিয়েছেন নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি প্রার্থীরই বেশি ভ‚মিক থাকা উচিত।
অপরদিকে গত উপনির্বাচনে হিরু আলমকে নিয়ে একপ্রকার সরগরম পড়ে গেলেও দ্বদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই চিত্র অনেকটা ভিন্ন। হিরু আলমকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগা মাধ্যমে যতটা সরগমর নির্বাচনী এলাকায় ততটা নয়। নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থান ঘুরে লক্ষ্য করা গেছে সতন্ত্র প্রার্থী ডাঃ জিয়াউলক মোল্লা ও ১৪ দলীয় জোট প্রার্থী এ, কে, এম রেজাউল করিম তানসেনকে নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে। ভোটারা জানান, এবার হেভিওয়েট প্রার্থী ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লা নির্বাচনী মাঠে থাকায় হিরু আলমকে তেমন গুরুত্বে কেউ দিচ্ছেনা। তবে প্রচার-প্রচারণায় সকল প্রার্থীই সরব রয়েছেন নির্বাচনী এলাকায়।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাহিন মোস্তফা কামাল ফারুক তাঁর কর্মী-সমর্থক নিয়ে হেভিওয়েট প্রার্থীদের মতই পাল্লা দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি প্রতিদিনই পথসভা, গণসংযোগ ও ভোটারদের কাছে গিয়ে লাঙল প্রতিকে ভোট প্রার্থনা করছেন। কাহালু উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান দ্বদশ সংসদ নির্বাচনে সতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ট্রাক প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। বিগত দিনে দুবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ও গত উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করে পরাজিত হলেও এখন নির্বাচনী এলাকায় তিনিও বেশ পরিচিত মুখ। তিনি সকল প্রার্থীদের মতই পাল্লা দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এদিকে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লার কারণে এখন বিএনপি ঘরনার অনেকেই নির্বাচনী প্রচারণায় রয়েছেন। যারফলে ২০১৪ সালের চেয়ে এই নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি অনেক বেশি হতে পারে বলে অনেক ধারণা দিয়েছেন। বর্তমানে বগুড়া-৪ আসন কাহালু-নন্দীগ্রাম এলাকার সর্বত্রই নির্বাচনী হাওয়া বিরাজ করছে।
Leave a Reply